ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা; দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকে কোভিড-১৯ এবং অন্যান্য সব ধরনের রোগীকে আলাদা ইউনিটে চিকিৎসা দিতে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দেশের সব সরকারি হাসপাতালে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একইভাবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনোস্টিক সেন্টার মালিকদের সংগঠনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।
গত ২৪ মে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন দেশের কোভিড-১৯ চিকিৎসা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেছেন। তারা ‘কোভিড-১৯’ এবং ‘নন কোভিড’ রোগীদের একই হাসপাতালের ভিন্ন ভিন্ন অংশে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তাব অনুযায়ী কোভিড এবং নন-কোভিড রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ৫০ শয্যা ও তার বেশি শয্যা বিশিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা চালুর নির্দেশ দেওয়া হল।
সারাদেশে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ৩৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে, গত এক সপ্তাহেই শনাক্ত হয়েছে ১০ হাজারের বেশি রোগী। এ পর্যন্ত ৫২২ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
শনাক্ত হওয়া রোগীদের বেশিরভাগই বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। করোনাভাইরাসের জন্য কিছু হাসপাতাল নির্ধারণ করে দিয়ে সেখানে বাকিদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল এতদিন।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রোগীদের ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে প্রায়ই। রোগীদের চিকিৎসা দিতে অপারগতা জানালে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরে তা প্রত্যাহার করা হয়।
এর আগে ১১ মে সরকারি হাসপাতালে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।
ওই চিঠিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পেতে সাধারণ রোগীরা সমস্যায় পড়ছেন। দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার এবং অন্যান্য জটিল রোগের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধা পাচ্ছেন।
ওই চিঠিতে সব সরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ সন্দেহে আসা রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, কোনোভাবেই রোগীদের ফেরত না পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
এছাড়া যারা দীর্ঘদিন ধরে ডায়ালাইসিস করছেন, কোভিড-১৯ হাসপাতাল থেকে ডায়ালাইসিসের জন্য স্থানান্তর করা হয়েছে এবং হৃদরোগ ও অন্যান্য জটিল রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত না হলে তাদের চিকিৎসা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ওই চিঠিতে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ফোকাল পারসন ও অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান খান বলেন, দেশের সকল হাসপাতাল এখন ‘প্রস্তুত হয়েছে’ সব ধরনের রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। উন্নত দেশগুলোও কিন্তু এবার হিমশিম খাচ্ছে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ করোনা পেশেন্টের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। একটি উন্নয়নশীল একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছে, সকল পেশেন্টকে প্রপার চিকিৎসা দেওয়ার জন্য।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনের সর্বশেষ (২৬ মে ২০২০) তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস শনাক্তে ঈদের দিনও অর্থাৎ গত ২৪ ঘণ্টায় চার হাজার ৪১৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় আগের কিছু মিলিয়ে পাঁচ হাজার ৪০৭টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো দুই লাখ ৫৮ হাজার ৪১১টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় আরও এক হাজার ১১৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৩৬ হাজার ৭৫১ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ২১ জন। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫২২ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ২৪৫ জন। এ নিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল সাত হাজার ৫৭৯ জনে।
আমাদের বাণী ডট কম/২৭ মে ২০২০/সিসিপি