মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে কাল বুধবার (১ মে) থেকে পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরতে নামবে জেলেরা। আজ ৩০ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। চাঁদপুর নৌ-সীমানায় নদীতে নিষেধাজ্ঞা শেষে। দীর্ঘ দদুই মাস অলস সময় কাটানোর পর কাল থেকে নদীতে মাছ ধরতে নদীতে নামছে প্রায় ৪১ হাজার জেলে। এ কারণে স্বস্তি ফিরে এসেছে জেলে পরিবারগুলোতে। কর্তৃপক্ষের দাবি, জাটকা রক্ষার কর্মসূচি সফল হওয়ায় এ বছর ইলিশের উৎপাদন বাড়বে।

জাটকা সংরক্ষণের জন্য সরকার গত দুই মাস চাঁদপুরসহ দেশের আরো কয়েক স্থানে অভয়াশ্রম ঘোষণা করে। এ সময় নদীতে যে কোন ধরনের মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ ছিলো।

নিষেধাজ্ঞা চলাকালে মেঘনা নদীর মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজেন্ডার পর্যন্ত ১শ’ কিলোমিটার এলাকায় সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ব ঘোষণা করা হয়। যার ৬০ কিলোমিটার পড়েছে চাঁদপুর এলাকায়। আর এ কারণে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব দক্ষিণ ও মতলব উত্তর উপজেলার ৪১ হাজার ১শ’ ৮৯ জন জেলে কর্মহীন হয়ে পড়ে। নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে মাছ ধরতে পারবে বলে জেলেদের মনে কর্মোদ্দীপনা ফিরে এসেছে। ইতোমধ্যে তারা সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে।

সোমবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর, দশানী, ষাটনলসহ বেশ ক’টি স্থানে ঘুরে দেখা যায়, জেলেরা জাল ও নৌকা মেরামত করে মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে নদীতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রকৃত জেলেদের ধারণা, খুব একটা ইলিশের উৎপাদন বাড়বে না।

মতলব উত্তর উপজেলার দশানী এলাকায় জেলেপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় জেলেরা এখন তাদের নৌকা ও জাল প্রস্তুত করছে। অনেকেই নৌকা মেরামত করছে। ইলিশ ধরার জন্য নৌকা ও ছান্দি জাল নিয়ে প্রস্তুত ওই জেলে পাড়ার মানিক বেপারী। তিনি জানান, গত ১০ দিন পূর্বে পদ্মা-মেঘনার পানি ছিলো পরিস্কার। এ কারণে চাঁদপুর নৌ-সীমানায় ইলিশ না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে আমরা ভোলা জেলার দৌলতখাঁ এলাকায় বেশির ভাগ সময়ে ইলিশ ধরতে যাই।

প্রবীণ জেলে সুভাষ বর্মন জানান, পদ্মা-মেঘনা নদীতে অনেক চর জেগেছে। নদীর নাব্যতা সঙ্কটের কারণে ইলিশের বিচরণ কমে যাচ্ছে। অন্যান্য প্রজাতির মাছ ধরা পড়লেও বড় সাইজের ইলিশের দেখা নেই। তারপরেও দুই মাস বেকার থাকার পর জীবন জীবিকার তাগিদে নদীতে নামবে জেলেরা।

সরকার জেলেদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাউল দিলেও জেলেরা এ বছর প্রচুর পরিমাণে জাটকা (ইলিশে পোনা) নিধন করেছে। ফলস্বরূপ ইলিশের আকাল দেখা দিবে।

ষাটনল বাবু বাজার মৎস্য আড়তের সভাপতি বদরউদ্দিন মিয়াজি জানান, ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছরই জেলে সংগঠনের পক্ষ থেকে যথাযথ ভূমিকা পালন করা হয়। উপজেলা টাস্কফোর্সের সাথে যৌথভাবে তারা জাটকা সংরক্ষণ অভিযানে সহযোগিতা করেন। জেলেদেরকে সচেতন করার কারণে এখন আর জাটকা নিধন করেন না। তবে কিছুু মৌসুমী অসাধু জেলে এসে জাটকা নিধনের চেষ্টা করে। তারা মতলব উত্তর অঞ্চলের কার্ডধারী জেলে না। তিনি আরো বলেন, গত দুই মাসে মতলব উত্তর অঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ অভিযানে যেসব জেলেকে সাজা দেয়া হয়েছে এসব জেলের অধিকাংশই অন্যান্য উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী মুন্সিগঞ্জ জেলার।

মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. নাছির উদ্দিন জানান, গত দুই মাসে আমরা ১২জন জেলেকে জাটকা আহরণকালে আটক করা হয়, আটককৃতদের ভ্রাম্যমান আদালতে ১ বছর করে বিনাশ্রম কারাদ- প্রদান করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় ৭৫ কেজি মাছ জব্দ করা হয়, যান আনুমানিক মূল্য ৩০ হাজার টাকা। ১ লক্ষ ৫৮ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়, যার আনুমানিক মূল্য ২১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। ৮টি মাছ ধরার নৌকা আটক করে নষ্ট করে দেয়া হয়, যার আনুমানিক মূল্য ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। ৫০ মন বরফ জব্দ করে নষ্ট করা হয়, যার আনুমানিক মূল্য ৫০ হাজার টাকা। সর্বমূল্য আনুমানিক মূল্য ২৭ লক্ষ ১৭ হাজার টাকা। জাটকা রক্ষায় আমরা রাত দিন নিরলস ভাবে অভিযান পরিচালনা করেছি।

মতলব উত্তর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন জানান, মূলত উপজেলা মৎস্য বিভাগ এখন জেলেদেরকে সচেতন করার জন্য বেশি কাজ করছে। কারণ এসব জাটকা বড় হলে তারাই আহরণ করবে। আশা করছি দুই মাসের কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের কারণে ইলিশ উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরো জানান, নভেম্বর থেকে জুন মাস পর্যন্ত ১০ ইঞ্চি নিচের সাইজের ইলিশ ধরা নিষেধ।

[wpdevart_like_box profile_id=”https://www.facebook.com/amaderbanicom-284130558933259/” connections=”show” width=”300″ height=”550″ header=”small” cover_photo=”show” locale=”en_US”]

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।