৩৪৪ আইসিটি শিক্ষকের এমপিও জটিলতা নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুস্পষ্ট প্রস্তাব পাঠাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। এসব শিক্ষকের জটিলতা নিরসনে বর্তমানে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সোমবার শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার ড. মো. আবদুল মান্নান গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দিয়ে নিয়মিত পাঠদান করছেন ৩৪৪ জন শিক্ষক। কিন্তু তারা এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। তাই এসব শিক্ষকের এমপিও জটিলতা নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।

শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার ড. মো. আবদুল মান্নান জানান, এসব শিক্ষক যে এমপিওভুক্ত হতে পারছেন সে বিষয়ে আমরা অবগত আছি। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রস্তাবনা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এ মূহুর্তে মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। মাঠপর্যায় থেকে তথ্য পৌঁছালে এসব শিক্ষকের বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এসব শিক্ষকের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সাথেও আমাদের আলোচনা হয়েছে।

এদিকে এসব শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জটিলতা নিরসনে গত ১৮ এপ্রিল অধিদপ্তরগুলোতে চিঠি পাঠায় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এনটিআরসিএ থেকে মামলার রায়ের কপিসহ চিঠি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছিল।

গত ১৮ এপ্রিল পাঠানো চিঠিতে এনটিআরসিএ অধিদপ্তরগুলোকে জানায়, ২০১৬ সালে প্রকাশিত শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও মামলার কারণে নিয়োগ সুপারিশ কার্যক্রম যথাসময়ে সম্পন্ন করা হয়নি। মামলা সম্পন্ন হয়ে গেলে রায়ের আলোকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো নির্দেশিকা মোতাবেক ফল চূড়ান্ত করা হয়।

চিঠিতে আরও বলা হয়, মামলার রায় অনুযায়ী সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি বা সমমান এবং সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার বিষয়ে ন্যূনতম ৬ মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণযোগ্য হওয়ায় কম্পিউটার বিষয়ে ৬ মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণধারীরাও নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। এ মামলার রায় অনুযায়ী ব্যবস্থা কেবলমাত্র ২০১৬ সালে প্রার্থীদের বেলায় প্রযোজ্য হবে, তার পরবর্তীদের বেলায় নয়।

এছাড়া চিঠিতে, মামলার রায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রেক্ষিতে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের বেলায় ৬ মাসের প্রশিক্ষণের পূর্বের নীতি অনুসরণ করার জন্য অর্থাৎ মামলার রায়ের মতে কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেছে এনটিআরসিএ।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে এনটিআরসিএ প্রকাশিত শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে আবেদন করেছিলেন অনেক প্রার্থী। কিন্তু আইনি জটিলতায় আটকে যায় তাদের নিয়োগ সুপারিশ। জটিলতা নিরসন হলে গত ডিসেম্বরে ১০৯৫ জনকে বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। এর মধ্যে ১০৪৭ জনকে সুপারিশপত্র দেয়া হয়। তবে তাদের মধ্য থেকে ৩৪৪ জন প্রার্থী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন বলে জানা গেছে। তারা ৬ মাসের ডিপ্লোমা ডিগ্রি নিয়ে কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেছেন। ২০১০ সালে জারি করা এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে ৬ মাসের ডিপ্লোমায় কম্পিউটার শিক্ষক পদে যোগদানের সুযোগ ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে জারি করা হয় নতুন এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো। নতুন সেই এমপিও নীতিমালায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান বা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক বা সমমানের ডিগ্রি অথবা বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড হতে ৩ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন-কম্পিউটার সায়েন্স বা সমমান শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এতে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। ৬ মাসের ডিপ্লোমায় যোগদান করায় এসব শিক্ষকের এমপিও আবেদন আঞ্চলিক উপপরিচালকরা ইএমআইএস সেলে অগ্রায়ন করছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এ জটিলতা নিরসনে অধিদপ্তরগুলোতে চিঠি পাঠিয়েছিল এনটিআরসিএ।

এদিকে এমপিওভুক্তির দাবি জানিয়ে গত ১ জুলাই মানববন্ধন করেছেন ২০১৬ সালে এনটিআরসিএ প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নিয়োগ সুপারিশ পাওয়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের ৩৪৪ সহকারী শিক্ষক।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।