ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা;  আগামী অর্থ বছরে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এছাড়া আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার এডিপির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে, যেখানে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।

আজ মঙ্গলবার (১৯ মে ২০২০)  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) ভার্চুয়াল সভায় আগামী অর্থবছরের এডিপির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যোগ দেন। এই এডিপির আকার চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি।

চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। তবে গত মার্চ মাসে তা সংশোধন করে ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।

তিনি বলেন, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য অনুমোদিত এডিপির অর্থ দিয়ে ১ হাজার ৫৮৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

এডিপির জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বহিঃসম্পদ থেকে ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকার যোগান দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়াও বৈঠকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য আরও ৯ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৫ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ৭০ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা যোগান দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর এই বরাদ্দ দিয়ে আরও ৮৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি। সে হিসাবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দসহ এডিপির সর্বমোট আকার দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মহামারীর এই সময়ে স্বাস্থ্য খাত আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত এবং আমরা গুরুত্বও দিয়েছি। কিন্তু সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ এ খাতের সক্ষমতা কতটুকু তাও দেখতে হবে। শুধু বরাদ্দ দিলেই তো হবে না। বাস্তবায়ন করতে হবে। তাই সক্ষমতা অনুযায়ী আমরা স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ গত অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়েছি। ১০ হাজার ১০৮ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাতে এই বরাদ্দ এডিপিতে মোট বরাদ্দের ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ, সপ্তম সর্বোচ্চ। বরাদ্দের দিক দিয়ে অষ্টম অবস্থানে থাকা কৃষি খাতেও প্রায় এক হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পরিবহনে। এ খাতে প্রায় ৫২ হাজার ১৮৩ কোটি (২৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ) টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরপর ধারাবাহিকভাবে ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে প্রায় ২৫ হাজার ৭৯৫ কোটি (১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ), বিদ্যুতে প্রায় ২৪ হাজার ৮০৪ কোটি (১২ দশমিক ০৯ শতাংশ), শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ২৩ হাজার ৩৯০ কোটি (১১ দশমিক ৪০ শতাংশ), বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে প্রায় ১৮ হাজার ৪৪৮ কোটি (৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ), গ্রামীণ অর্থনীতি ও পরিবার কল্যাণ খাতে প্রায় ১৩ হাজার ৩৩ কোটি (৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ), কৃষিতে প্রায় ৮ হাজার ৩৮২ কোটি (৪ দশমিক ০৯ শতাংশ), পানি সম্পদে প্রায় ৫ হাজার ৫২৭ কোটি (২ দশমিক ৬৯ শতাংশ) এবং জনপ্রশাসনে প্রায় ৪ হাজার ৪৮ কোটি (১ দশমিক ৯৭ শতাংশ) টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সর্বাধিক বরাদ্দ পাবে ৩১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, এরপর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২৪ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগ ২৪ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১৭ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ১০ হাজার ৫৪ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগ ৯ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগ ৯ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা, সেতু বিভাগ ৭ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৬ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা পাবে।

আমাদের বাণী ডট কম/১৯ মে ২০২০/ডিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।