রংপুর মহানগরীর নজিরেরহাটের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ২৫ সপ্তাহের অন্তঃস্বত্তা (১২) আদালতের বিচারকের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে। বুধবার বিকেলে রংপুর চীফ জডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত-১ এর বিচারক স্নিগ্ধা রাণী চক্রবর্তি তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

রংপুর কোর্টের জিআরও আবুল কালাম জানান, চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার মামলার বাদী হাজিরহাট থানার এসআই ফেরদৌস আলম বিকেলে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালত-১ শিশুটিকে আনেন। আদালতের বিচারক স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তি নারী শিশু ১১ ধারায় তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ-আরপিএমপির হাজিরহাট থানার এসআই ফেরদৌস আলম জানান, রংপুর মহানগরীর নজিরের হাটের রাধাকৃষ্ণপুর রহমতপাড়ার জনৈক এক গৃহকর্মী পাশ্ববর্তি জুয়েলের মালিকানাধীন সোনার বাংলা নার্সারি ও এগ্রোবাংলা লিমিটেডের কেয়ারটেকার তোফাজ্জল হোসেনের রান্নাবাড়ার কাজ করতো। মায়ের কাজ করার সুবাধে তার কন্যা রাধাকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী (১১) সেখানে যাতায়াত করতো। মায়ের সাথে সেও ওই নার্সারিতে বিভিন্ন কাজকর্ম করতো। এরই মধ্যে সে অন্ত:স্বত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর দেখা যায় ওই শিশুকন্যা ২৫ সপ্তাহের অন্তঃস্বত্তা। এরপর মেয়েটিকে নজিরেরহাটে ল্যাপরোসি মিশনে ভর্তি করা হয়। এরপর মেয়ের মা বিলকিস বেগম ১৮ আগস্ট হাজিরহাট থানায় অজ্ঞাতনামাদের অভিযুক্ত করে একটি ধর্ষন মামলা করেছেন। সেই মামলায় বুধবার সন্ধায় শিশুটিকে কঠোর নিরাপত্বায় আদালতে নেয়া হয়েছে। আদালতে শিশুটি জবানবন্দি দিয়েছেন। খুব শীঘ্রই বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মিডিয়াকে অবহিত করা হবে।

তিনি বলেন, যার বিরুদ্ধে ধর্ষনের প্রাথমিক অভিযোগ তিনি মারা গেছেন। প্রাথমিকভাবে তিনি বিষক্রিয়ার কারণে মৃত্যুর বিষয়টি বলা হচ্ছে। তবে তার মৃত্যুটা স্বাভাবিক নাকি বিষক্রিয়ায় হয়েছে সে বিষয়টি আমরা তদন্ত শুরু করেছি। হাসপাতালের কাগজপত্র নেয়ার চেষ্টা করছি। তিনি জানান, মেয়েটি ছোট ও অন্ত:স্বত্বা হওয়ায় এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। তাকে আমরা রিকভারি করার চেষ্টা করছি। তবে খুব শীঘ্রই ধর্ষন ও অভিযুক্ত ধর্ষকের মৃত্যুর বিষয়টির ক্লু উদঘাটন করা হবে।

সোনারবাংলা নার্সাসি এন্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের মালিক জুয়েল জানান, তিন বছর থেকে তোফাজ্জল আমার নার্সারির সব বিষয় দেখাশুনা করে আসছে। আমি কখনও ব্যাংকে কখনও হাতে হাতে তাকে প্রয়োজনীয় টাকায় পয়সা দিতাম। ঈদের ছুটিতে আমি গ্রামের বাড়িতে যাই। ১৬ জুলাই শুক্রবার খবর পাই তোফাজ্জল বিষ খেয়েছে। সাথে সাথে আমি লোকপাঠিয়ে তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে হার্ট এ্যটাকে তিনি মারা যান। এরপর তাকে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। আমার সাধ্য অনুযায়ী তার পরিবারের পাশে দাড়ানোর ব্যাবস্থাও করেছি। তোফাজ্জলের বিরুদ্ধে একজন তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষনের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। পোস্টমোর্টেম ছাড়াই দাফনের ব্যপারে তিনি বলেন, পরিবার চায়নি তাই পোস্ট মোর্টেম হয়নি।

তবে এলাকাবাসী ও পুলিশের বিভিন্ন সূত্রের ধারণা, ধর্ষনের ঘটনার সাথে তোফাজ্জল নাকি অন্য কেউ আছে তা খতিয়ে দেখছেন তারা। কারণ তোফাজ্জলের বিষপানে মৃত্যুর ঘটনাটি রহস্যজনক। তার বাড়ির লোকজনও সেভাবে কথা বলছে না। পুলিশ সুত্রের ধারণা একটি সংঘবদ্ধ চক্র তোফাজ্জলের মৃত্যুর বিষয়টির মাধ্যমে ধর্ষনের বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা করছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।