কিছুক্ষণ মধ্যেই ঘোষণা করা হবে বরগুনার বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায়। রায় উপলক্ষে ইতোমধ্যে কারাগারে থাকা এ মামলার আট আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালতে হাজির হয়েছেন জামিনে থাকা নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিও।

বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে র্যাব ও পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় প্রিজনভ্যানে আসামিদের আদালতে নিয়ে আসা হয়। এর আগে সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে বাবার সঙ্গে মোটরসাইকেলে চড়ে আদালতে হাজির হন। নিহত রিফাতের স্ত্রী ও এ মামলার অন্যতম আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।

এ মামলার রায় ঘিরে আদালত প্রাঙ্গণে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অন্য দিনগুলোর মতো আজ আদালতে ঢুকতে পারেননি আসামিদের স্বজনরা। এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে আদালতের বাইরে দাঁড়িয়ে আসামিদের মুক্তির জন্য দোয়া-দরুদ পড়ছেন স্বজনরা।

মামলার আসামি কামরুল ইসলাম সাইমুনের বাবা মো. লিটন বলেন, আমার ছেলে নির্দোষ। তার জন্য আদালতে সাফাই সাক্ষীও দেয়া হয়েছে। আজ তার ভাগ্য নির্ধারণ হবে। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছি- যাতে সাইমুন খালাস পায়। আমার ছেলে আসলেই নির্দোষ। আমি তার মুক্তির জন্য সবার দোয়া চাই।

আরেক আসামি সাগরের বাবা আবদুল হাই বলেন, আমার ছেলেও নির্দোষ। ঘটনার সময় আমার ছেলে ঘটনাস্থলে ছিল না। আদালতে ঢুকতে পারিনি। তাই বাইরে দাঁড়িয়ে ছেলের মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি। এছাড়া আর কিছুই করার নেই আমার।

গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন আদালত। মোট ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে এ মামলায়। মামলার ৬ নম্বর আসামি মুসা এখনও পলাতক।

১৬ সেপ্টেম্বর মামলার দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আসাদুজ্জামান রায়ের জন্য বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দিন ধার্য করেন।

রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলেন- রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, মো. মুসা, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন।

২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের উপস্থিতিতে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পরে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

ঘটনার পরদিন ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দু’ভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামি করা হয়।

গত ৩০ জুলাই বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করেন। তার আগে ২১ জুলাই বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালত মিন্নির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর মিন্নির জামিনের বিষয়টি হাইকোর্টে আসে। এ অবস্থায় মিন্নির জামিন কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে গত ২০ আগস্ট রুল জারি করেন হাইকোর্ট। অবশেষে ২৯ আগস্ট দুই শর্তে মিন্নির জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। বর্তমানে জামিনে রয়েছেন মিন্নি।

আমাদের বাণী ডট কম/৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০/পিপিএম

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।