৯ আগস্ট। জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। মৌ প্রত্যাশা নকরেক। যিনি প্রথম আদিবাসী আরজে। বর্তমানে কর্মরত আছেন একটি স্বনামধন্য বেসরকারি রেডিও স্টেশনে। কিন্তু একজন সফল আরজে হয়ে উঠা তার জন্যে এত সহজ ছিল না।

ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার জয়রামকুড়া গ্রামের একটি গারো পরিবারে তার জন্ম। বাবা দেবব্রত দেবনাথ ও মা অনুভা নকরেকের বড় মেয়ে প্রত্যাশা। বাবা মার কর্মস্থলের সুবাদে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ছোটবেলা থেকেই আবৃত্তি ও নাচে পারদর্শী প্রত্যাশা এসএসসি পাশ করেছেন ঢাকার বটমলী হোমস গার্লস হাই স্কুল থেকে। যখন রাজধানীর ওয়াইডব্লিউসিএ উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন। তখন তিনি এফএম জগতের সাথে পরিচিত হন। এফএম রেডিও এর শো শুনতে শুনতে স্বপ্ন বুনেন নিজেও একজন আরজে হওয়ার।

তিনি বলেন, ‌‘একজন শ্রোতা চাইলেই এখন অনেক সহজেই এফএম রেডিও শুনতে পারেন এবং তার পছন্দের আরজে’র সাথে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারেন। কিন্তু তখন আমি অনেক এসএমএস করতাম। যখন কোনো আরজে আমার পাঠানো একটা এসএমএস পড়ত তখন অনেক ভালো লাগত।’

তিনি আরো বলেন, ‘একদিন মনে হল কোন একদিন যদি আমার ভয়েসটাও এভাবে রেডিওতে শোনা যেত। আমি কখনও যদি এইভাবে Good Morning Dhaka বেলতে পারতাম।’ বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে ‘শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগ অধ্যয়নরত অবস্থায় তার বান্ধবীর সহযোগিতায় একটি বেসরকারি রেডিও স্টেশনে ইন্টারভিউ দেয়ার সুযোগ পান। এরপর ভয়েস টেস্ট, গ্রুমিং সেশন সফলতার সাথে শেষ করার পর তিনি তার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের দেখা পান। একই বিষয় থেকে মাস্টার্স শেষ করা প্রত্যাশা, এই আগস্টেই সফলতার সাথে তার আরজে জীবনের এক বছর সম্পন্ন করলেন। তিনি বলেন, আদিবাসীদের নিয়ে সবার একটাই ধারণা তারা প্রমিত বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারে না। তাই নানা জায়গায় আদিবাসীদের অবহেলিত হতে হয়। তিনি আরো বলেন, ‘আদিবাসী হওয়ায় আমাকে অনেক কটু কথাও শুনতে হয়েছে।’

নারীকে সামাজিক প্রেক্ষাপটে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তবুও নারীকে নিজের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। কারণ সফলতার সঙ্গী সবাই হতে চাইলেও ব্যর্থতার দায় নারীকেই বহন করতে হয়। জীবনে সফলতা অর্জনে আত্মবিশ্বাসের বিকল্প নেই। আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে সফল হোক প্রতিটি নারী। মৌ প্রত্যাশা রেডিও স্টেশনের পাশাপাশি অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তিনি এই অটিজম আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে আরো অনেক কাজ করতে চান।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।