আবাসিক হোটেলে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া বরিশালের বাকেরগঞ্জ হযরত আলী ডিগ্রী কলেজের জনবল নিয়োগ আত্মীয়স্বজন দিয়েই সম্পন্ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যে ৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা সকলেই ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, অধ্যক্ষ ও নিয়োগ বোর্ড সদস্যদের স্বজন।

গত বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) নগরীর আবাসিক হোটেল এরিনায় ওই পদে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হলে সমালোচনায় পরেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে নিয়োগ প্রত্যাশীরা অভিযোগ তুললেও অবশেষে নিয়োগ পেয়েছেন স্বজনরাই।

অভিযোগ রয়েছে, ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আর এ হাওলাদারের শ্যালকের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার গত ১৮ জুলাই কলেজের অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ প্রত্যাশী হিসেবে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। মেধা তালিকায় ৩৮তম ছিলেন সুমাইয়া। সভাপতি ওই পরীক্ষা বাতিল করে পুনঃনিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন ওই পদে। গত ২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ওই পদে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয় বরিশালের আবাসিক হোটেল এরিনার কনফারেন্স কক্ষে। আর ওই পরীক্ষায় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ পেয়েছেন সুমাইয়া।

একই পদে নিয়োগ পেয়েছেন কলেজের বিদ্যোৎসাহী সদস্য ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য জাপা নেতা বশির আহমেদ সবুজের ভাগ্নেবধু কামরুন্নাহার কলি। তিনি ১৮ জুলাই অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষা ২৫ তম হয়েছিলেন। কিন্তু গত বৃহস্পতিবারের পরীক্ষায় তিনি সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে নিয়োগ পেয়েছেন। এমন স্বজনপ্রীতিতে ক্ষুব্ধ নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও নিয়োগ প্রত্যাশীরা। তারা এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল দাবি করেছেন।

কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং নিয়োগ বোর্ডে থাকা এক সদস্য বলেন, গত বৃহস্পতিবার হযরত আলী ডিগ্রী কলেজের যে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে তা কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, অধ্যক্ষ ও নিয়োগ বোর্ডে থাকা কয়েকজন সদস্যর নিকটাত্নীয়কে নিয়োগ দিতেই প্রস্তুত করা হয়েছে। পূর্বে সিদ্ধান্ত ছিলো কলেজেই পরীক্ষা হবে। কিন্তু তা হঠাৎ করেই ভেন্যু পাল্টে আবাসিক হোটেল এরিনায় নেয়া হয়। প্রথম পরীক্ষায় যারা তালিকায় পিছনে ছিলেন তাদেরকে সর্বোচ্চ নম্বর দিয়ে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, ৯টি পদে যাদের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে তারা কেউ সভাপতির আত্মীয়, কেউ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের আত্মীয় আবার রাজনৈতিক নেতাদের স্বজনও রয়েছে। তবে এদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ না করে গোপনে নিয়োগ পত্র দেবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

নিয়োগ পাওয়া অন্যান্যরা হলেন- ল্যাব সহকারী হিসেবে ঝর্ণা আক্তার সভাপতি আর এ হাওলাদারের নিকটাত্মীয়। কলেজ সংলগ্ন তার শশুরের থাকা জমি কলেজে দান করার প্রতিশ্রুতিতে চাকুরী পেয়েছেন ঝর্না। আয়া হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অনীমা রানী। তার কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এম এ জব্বার বাবুল এর বিরুদ্ধে। অফিস সহায়ক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে মিলন ফকির, মিলন হাওলাদার এবং রায়হান হাওলাদার। মিলন ফকির কলেজ অধ্যক্ষ জাকির হোসেনের নিকটাত্মীয়।

উৎকোচ দিয়ে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও দাড়িয়াল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এম এ জব্বার বাবুলের বাবুর্চি সোহেল হাওলাদার। নৈশ প্রহরী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আমিন আকন। তিনি জাপা নেতা বশির আহমেদ সবুজের নিকটাত্মীয়। অভিযোগ রয়েছে তার কাছ থেকেও মোটা অংকের টাকা নেয়া হয়েছে।

এদিকে এ নিয়োগ অবৈধ দাবী করে একাধিক নিয়োগ প্রত্যাশী সোমবার কলেজ কম্পাউন্ডে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এসময় তারা নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল দেখতে চান। নিয়োগ প্রত্যাশী রিপা আক্তার এবং হাসান মাহামুদ বলেন, অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে তারা পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু কলেজ অধ্যক্ষ তাদের জানিয়েছেন যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে না, যারা নিয়োগ পেয়েছে তাদের নিয়োগপত্র দেয়া হয়েছে। এটা কোন আইনের মধ্যে পরেনা। তারা নিজেদের লোকদের নিয়োগ দিলে পাতানো পরীক্ষার কি দরকার ছিল।

এ ব্যাপারে বাকেরগঞ্জ হযরত আলী ডিগ্রী কলেজ অধ্যক্ষ জাকির হোসেন বলেন, ৯ জনকে নিয়োগ প্রদান করে তাদের নিয়োগপত্র পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলাফল প্রকাশ না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা কলেজের বিষয়। গত পরীক্ষায় যারা পেছনের সারিতে ছিলো তারা কিভাবে নিয়োগ পেল জানতে চাইলে, তিনি বলেন, বিষয়টি সভাপতি জানেন।

তবে কলেজ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আর এ হাওলাদারের সাথে মোবাইলে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।