একসময়ের প্রভাবশালী রাষ্ট্রপতি যিনি দীর্ঘ নয় বছর বাংলাদেশ শাসন করেছেন, বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জ তথা অবহেলিত জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নের জন্য লড়াই করেছেন, শেষ জীবনে এসে প্রায় নিঃসঙ্গতার মধ্যে তাকে দিন পার করতে হয়েছে।

জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন দলীয় মতামতের ওপর ভিত্তি করে এবং সবার সঙ্গে আলোচনা করে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম লিখন জীবন সায়াহ্নে বিশ্বস্ত কয়েকজন গৃহকর্মী ছাড়া তার পাশে কিউই ছিলেন না।

এরশাদের শেষজীবনের নিঃসঙ্গতার চিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে প্রাক্তন স্ত্রী বিদিশা এরশাদ তার ফেসবুক পেজে উল্লেখ করেন, ‘৪০ বছরের বেশি ব্যবধান আমাদের দুজনের বয়সের। কিন্তু একদিনও উনি আমাকে তা বুঝতে দেননি সেই পার্থক্যটা।’

অসমাপ্ত প্রেম

‘আমাদের বিয়ের আগে আমরা এনগেইজড হই লন্ডনে। উনি নিজেই একটা হীরের আংটি কিনে আনেন লন্ডনের এক দোকানে গিয়ে। সেই দিন উনি আমার কাছে থেকে কথা নেন মৃত্যু ছাড়া যেন আমরা আলাদা না হই। আজও আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

আমার নিজের ফ্ল্যাট, তখন আমরা বেশকিছু দিন লন্ডন ছিলাম। বিএনপি ক্ষমতায়, তখন আমরা দেশ ছাড়া। উনি খুশি হননি এত ছোট হীরের আংটি কিনে। আর আমি তো উনার ব্যবহার দেখে খুশিতে আত্তহারা।

ঠিক পরের বছরই উনি বিয়ের দিন নিজের হাতের দুই ক্যারেটের আংটিটি খুলে আমাকে পরিয়ে দিয়ে বললেন, আমার বন্ধু সৌদি বাদশাহর দেয়া আমার এ আংটিটি আজ আমি আমার রানিকে দিলাম। খুব অল্প কয়টা বছর আমাদের প্রেম, সংসার হয়েছিল। এত ভালোবাসতে পারে কেউ? বিএনপি ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলাম আমরা।

কোনো দোকানে আমি শ্যাম্পুর বোতল খুলে গন্ধ বা সাবানের ঘ্রাণ নিলে উনি পরের দিন কিনে নিয়ে আসতেন ওগুলো। আমি বিস্মিত হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলে বলতেন, তোমার চুলে আমি গন্ধটা পেতে চাই। এমন কত যে অসংখ্য মেমোরি আছে আমাদের, লিখে শেষ করা যাবে না তা।

‘গতকাল থেকে উনার বেশ জ্বর। হসপিটালের আইসিইউতে শুয়ে আছেন। রুগ্ন, ক্লান্ত শরীর। বয়সের ভারে টায়ার্ড। আর চলতে চায় না জীবন। অন্য সবাই মেনে নিয়েছে বয়সের কাছে হার মানা এরশাদকে। ফিসফিস করে সবাই কবরের কথাও বলছে, কানে আসছে আমার।

কিন্ত আমি ও এরিক তো হার মানতে দিব না তোমায়। আমরা তো রাজনীতির প্যাঁচ বুঝি না। এরিক জায়নামাজে আছে পড়ে, কয়টা দিন। তুমি ছাড়া ও একা ভাত খেতে চায় না। শুধু তুমি ভালোভাবে ফিরে এসো। আমরা তোমাকে এই অবস্থায়ই চাই। তুমি যে অবস্থায় আছো তেমনি চাই।’

‘আমরা তিনজন শুধু। তুমি, আমি ও আমাদের এরিক। আর কেউ না। হসপিটাল থেকে ফিরে এসে বাড়িতে তুমি রেস্ট নিবে। এরিক গান শুনাবে তোমাকে, আমি পিয়ানো বাজাবো বা তোমার প্রিয় ফিসফ্রাই রান্না করব।

সন্ধ্যায় আড্ডা দিব। মা, বাবা ও ছেলে লুডু খেলব। বা, আমি নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে বাপ-ছেলেকে কাবাব খাওয়াতে নিয়ে যাব, খেলার বাজিতে হেরে গেলে।’

আজও কিন্তু আমি অপেক্ষায় থাকলাম নীল শাড়িটির ভাজ খুলবো, এ আশায়- বিদিশা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।