টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে মূল্য, মজুরি ও কর্মসংস্থানের বিকল্প নেই। গত কয়েক অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থবছর শেষে এ হার ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ অর্জিত হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কর্মসংস্থানবিহীন প্রবৃদ্ধি টেকসই হয় না। এ জন্য কর্মসংস্থানে নজর দিতে হবে। বাজেট তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা  বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে কর্মসংস্থান তৈরিতে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। আগামী বাজেটে যুবকদের জন্য বিশেষ ফান্ড থাকছে।

পাশাপাশি বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানিদের দক্ষ করে তোলার উদ্যোগ থাকছে। এ ছাড়া দক্ষতা বাড়াতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে ‘স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের’ (এসইআইপি) আওতায় ৫ লাখ যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে ১ লাখ মানুষকে দেওয়া হবে ড্রাইভিং শিক্ষা। তাদের ভাষা ও ট্রাফিক আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশ পাঠানো হবে।

জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন তহবিলের আওতায় কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রমেও পরিবর্তন আনা হবে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সরকার জবলেস প্রবৃদ্ধি থেকে বের হয়ে আসতে চায়। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হবে।

সূত্র জানায়, আগামী বাজেটে দারিদ্র্য বিমোচন ও অসমতা কমানোর লক্ষ্যে মানসম্মত শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার পরিকল্পনা সরকারের। যার মাধ্যমে মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান বাড়বে। ফলে দরিদ্রশ্রেণির মানুষ ধীরে ধীরে উচ্চ বেতনের চাকরিতে প্রবেশ করতে পারবে। এতে আয় বাড়বে দরিদ্র মানুষের।

আগামী বাজেটে এ ধরনেরই কৌশল রাখা হবে। আগামী বাজেটে উদ্যোক্তা তৈরিতে বিশেষ নজর দেওয়া হবে। শিক্ষিত যুবক এবং বর্তমানে ছোটখাটো ব্যবসায় আছেন এমন উদ্যোগীদের নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর ভিত্তিতে ঋণ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরি করা হবে, যেন তারা নিজেরা উচ্চ আয়ের পথ সুগম করতে পারে। বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, জিডিপি বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়ার কথা।

কিন্ত বাংলাদেশে যে হারে জিডিপি বাড়ছে, সে হারে কর্মসংস্থান আমরা দেখতে পাচ্ছি না। ফলে বেকার সমস্যার সমাধান পুরোপুরি হচ্ছে না। সরকার যেসব প্রোগ্রাম নিচ্ছে, সেগুলোর স্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক কম বলে মনে করেন তিনি। সূত্র জানিয়েছে, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলাসহ চার কারণে সরকার প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত আগ্রহী শতভাগ ছাত্রী এবং প্রায় ৫০ শতাংশ ছাত্রকে আর্থ-সামাজিক অবস্থার ভিত্তিতে বৃত্তি দেওয়া হবে।

সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলের অংশ হিসেবে কারিগরি ও পেশাগত (ভোকেশনাল) শিক্ষার গুণগত মান ও প্রাসঙ্গিকতা বাড়াবে। সার্বিকভাবে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শক্তিশালী করতে ইন্ডাস্ট্রি স্কিলস কাউন্সিল (আইএসসি) সহায়তা দেবে জিইএস ন্যাশনাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলকে (এনএসডিসি)। এ ছাড়া এসএসসি (ভোকেশনাল) কার্যক্রমে প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সহায়তাও দেওয়া হবে।

কারিগরি এবং ভোকেশনাল শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ খাতের ব্যবস্থাপনা ও গুণগত মান নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী সংস্থা যথা? কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এবং জনশক্তি প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর সক্ষমতা জোরদার করবে সরকার। সৌজন্যে, আমাদের সময়

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।