ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় দুর্গম চর, হাওর ও উপকূলীয় ১৩টি উপজেলায় ‘গণতান্ত্রিক সুশাসনে জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিপিডি ও অক্সফাম ইন বাংলাদেশ। প্রকল্পের অধীনে কুড়িগ্রাম, জামালপুর ও সিরাজগঞ্জের তিনটি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় জরিপ চালানো হয়। এতে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি স্কুলে অপ্রতুল শিক্ষক। শিক্ষকরা ইচ্ছামাফিক স্কুলে যাওয়া-আসা করেন। ৪৩-৬৮ শতাংশ স্কুলে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী।

গতকাল বুধবার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক সুশাসন ও উন্নয়ন : জনসম্পৃক্ত তৃণমূল প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা’ শীর্ষক দিনব্যাপী সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে জরিপের এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বক্তব্য দেন। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ কার্যালয়ের রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিংক, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. দীপঙ্কর দত্ত প্রমুখ।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) আটটি অভীষ্ট বাস্তবায়নে জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধিতে নেওয়া ওই প্রকল্পের আওতায় পরিচালিত জরিপের ফলাফলে বলা হয়, ওই সব এলাকার ৫২-৫৭ শতাংশ স্কুলে মেয়েদের আলাদা ল্যাট্রিন নেই। কোনো বিদ্যালয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। ৭১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়তে উৎসাহিত করেন। ৬২-৮৫ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে হয়। চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও বরগুনা সদর উপজেলায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ও কমিউনিটি ক্লিনিকে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ প্রায়ই থাকে না। সন্দ্বীপে ৪৫ শতাংশ ও বরগুনায় ৬০ শতাংশ সেবাগ্রহীতা বলেছেন, তাঁরা প্রয়োজনীয় ওষুধ পান না। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কম খোলা থাকে। বরগুনায় চারটি কমিউনিটি ক্লিনিকের তিনটিতেই ওষুধ পেতে পাঁচ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়।

সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। নানা সূচকে উন্নয়ন হয়েছে। তবু পিছিয়ে আছে অনেক জায়গায়। স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ যে সূচকগুলোতে উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, কাজ করা হচ্ছে, সেই সূচকগুলোতে আমাদের অর্জন কতটুকু সেটার একটা সার্বিক মূল্যায়ন হওয়া জরুরি। এসডিজি অর্জনে যে টাকা খরচ হচ্ছে তার কতটুকু কাজে লাগছে, কতটুকু লিক হচ্ছে বা অন্য লোকের পকেটে চলে যাচ্ছে, ঠিকাদার বা সরকারি কর্মচারীর পকেটে যাচ্ছে সেটা দেখতে হবে। উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা কোথায় যায় তার খবর রাখতে হবে।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।