একদিনে ঝরে গেল আরো ২২ প্রাণ

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া এবং সুনামগঞ্জে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত ও ২১ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানে দুর্ঘটনায় নিহত হন আরো ৬ জন।
সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়াতে বাস-লেগুনা সংঘর্ষে ৯ জন নিহত ও ১৬ জন আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

দুপুরে বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের বোয়ালিয়া বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু ইউসুফ ও উল্লাপাড়া থানার ওসি দেওয়ান মোহাম্মদ কৌশিক এ তথ্য জানান।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী, উল্লাপাড়া ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার নাদির হোসেন ও সিরাজগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আব্দুল হামিম জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা পাবনা এক্সপ্রেস (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৭৮৩৭) বোয়ালিয়া ব্রিজের ওপর ওঠা মাত্র উল্লাপাড়া থেকে ছেড়ে আসা হাটিকুমরুলগামী একটি লেগুনার সাথে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে। এতে লেগুনার ড্রাইভারসহ আটজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহত হন আরো ১৬ জন। আহতদের মধ্যে পাঁচজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো একজন মারা যান।

নিহতরা হলেন, উল্লাপাড়া উপজেলার ভাদালিয়াকান্দি দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক কয়ড়া কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা নূরুল ইসলাম (৩৫), ফজলু (৩১), সবুজ (৩৬), পাগলা বোয়ালিয়া গ্রামের (লেগুনা ড্রাইভার) রেজাউল করিম (২৬), বড়হর গ্রামের ইনছাব আলীর ছেলে আক্তার হোসেন (৪২), কেউকান্দি গ্রামের আব্দুল মান্নান (২৮), কয়ড়া গ্রামের মোহাম্মদ আলী (২২) ও আব্দুল বারি (৩০) এবং সিরাজগঞ্জ সদরের কোনাগাতি গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে হাফিজুল ইসলাম (৩২)। আহত অন্যদের স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

এ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা, উল্লাপাড়া থানা, সলঙ্গা থানা, সিরাজগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও উল্লাপাড়া ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধারকাজ শুরু করে। এলাকাবাসীও উদ্ধারকাজে যোগ দেন। সড়ক দুর্ঘটনার পর বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের বোয়ালিয়ায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় এবং প্রায় এক ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জ-দিরাই আঞ্চলিক সড়কের পাথারিয়া গণিগঞ্জ এলাকায় গতকাল সকালে একটি যাত্রীবাহী বাস ও লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষে লেগুনা চালকসহ সাত যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। অপর ছয় যাত্রী গুরুতর আহত হন। নিহতরা হলেন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের দুর্বকান্দা গ্রামের ইষ্টু মিয়ার ছেলে মো: সাগর মিয়া (১৬), একই উপজেলার গাগল গ্রামের ফজল মিয়ার ছেলে মো: মিলন মিয়া (১৭), মো: আলীর ছেলে মো: আফজাল মিয়া (১৭), শাল্লা উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামের মনিন্দ্র কুমার দাশের ছেলে মিতেশ দাস (২৫), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কুটি পাড়া গ্রামের নারায়ন চন্দ্র সাহার ছেলে শিপন কুমার সাহা (৩৩), দিরাই উপজেলার রাফি নগড় ইউনিয়নের সিচনী গ্রামের মো: ফুল মিয়া ছেলে ফজল করিম ও লেগুনার চালক জয়কলস ইউনিয়নের ঘাগলি গ্রামের আলী আকবরের ছেলে মো: রোমান (২৮)। গুরুতর আহতরা হলেনÑ জেলার শাল্লা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের রাধা কৃষ্ণের ছেলে শঙ্কর দাস (২১), তার ন্ত্রী তারামণি (১৮), দিরাই উপজেলার মকসদুপুর গ্রামের মহরম আলীর ছেলে মো: কাশেম (২৪), দিরাই ভাটিপাড়া ইউনিয়নের আবুল হোসেনের ছেলে মো: রাজু (২০), দিরাই গচিয়া গ্রামের ইমান আলীর ছেলে মো: কাজল (৩০), দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পশ্চিম বুরগাঁও ইউনিয়নের দুর্বাকান্দা ঠাকুরভোগ গ্রামের ফজল মিয়ার ছেলে রেজাউল (১৬) ও দিরাই রফিনগর এলাকার সেচনি গ্রামের ফুল মিয়ার ছেলে মো: ফজলু করিম (৩০)।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে লিমন পরিবহন একটি যাত্রীবাহী বাস দিরাই যাওয়া পথে এবং দিরাই থেকে সুনামগঞ্জে আসার পথে একটি যাত্রীবাহী লেগুনা দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের গণিগঞ্জ এলাকায় মুখোমুখি সংঘের্ষ দু’টি বাস পার্শ^বর্তী খাদে পড়ে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানা পুলিশ ও জেলা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে।

নিহত ৭ পরিবারের প্রত্যেক পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশ হাজার করে টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বিকেলে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে এ আর্থিক সহায়তা তুলে দেন সুনামগঞ্জ-৩ (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
বড়াইগ্রাম (নাটোর) সংবাদদাতা জানান, নাটোরের বড়াইগ্রামে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারিয়া তাসনিম (৮) নামে এক শিশু নিহত ও একই পরিবারের আরো পাঁচজন আহত হয়েছেন। ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পথে গতকাল সকালে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের বনপাড়া পাটোয়ারী ফিলিং স্টেশনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মারিয়া তাসনিম ঢাকার কদমতলী থানায় কর্মরত উপ-পরিদর্শক আব্দুল জলিলের মেয়ে।

বনপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন জানান, ছুটিতে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে এসআই আব্দুল জলিল পরিবারসহ হাইএস মাইক্রোবাসে (ঢাকা মেট্রো ছ ১৯-২৭৮৫) নাটোরের সিংড়ায় যাচ্ছিলেন। পথে বনপাড়া এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশের গাছের সাথে ধাক্কা লেগে মাইক্রোটি উল্টে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই আব্দুল জলিলের মেয়ে মারিয়া তাসনিম নিহত ও আরো পাঁচজন আহত হন। আহতদের মধ্যে আব্দুল জলিল (৪৫), তার স্ত্রী রিনা খাতুন (৪০), ছেলে তাসনিম আহমেদ (১৫), অপর মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া (৩) এবং মাইক্রোবাসের চালককে (৩৫) স্থানীয় ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর সড়কের বাংলাবাজার নামক স্থানে গতকাল দুপুরে ট্রাক চাপায় খোতেজা বেগম (৪৫) নামে এক সিএনজি অটোরিকশা যাত্রী নিহত হয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, চৌমুহনীগামী একটি সিএনজি অটোরিকশাকে একই দিক থেকে আসা একটি ট্রাক পেছন দিক থেকে চাপা দিলে সিএনজি অটোরিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলে খোতেজা বেগম নিহত হন। তিনি বেগমগঞ্জ উপজেলার আমান উল্লাপুর ইউনিয়নের জয়নারায়ণ পুর গ্রামের নুর হোসেনের স্ত্রী।এ সময় গুরুতর আহত অবস্থায় সিএনজি অটোরিকশার চালককে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভালুকা (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা জানান, ময়মনসিংহের ভালুকায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় এক ইউপি সদস্যসহ দুইজন নিহত ও অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। আহতদের প্রথমে

ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। দুর্ঘটনা দুটো ঘটে গতকাল দুপুরে ও শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পৌরসভার বাগরাপাড়া ও ভরাডোবা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পৌরসভার বাগরাপাড়া এলাকায় যাত্রীবাহী ভ্যানকে একটি লরি চাপা দিলে ছয় ভ্যানযাত্রী আহত হন। তাদেরকে ভালুকা ৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতালে নেয়ার পর নাজমুল (৪০) নামে একজন মারা যান। নিহত নাজমুল পাশের গফরগাঁও উপজেলার রসুলপুর গ্রামের রতন মিয়ার ছেলে। অপর দিকে শনিবার রাতে একই মহাসড়কের উপজেলার ভরাডোবা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় মুরগিবোঝাই ট্রাকচাপায় নজরুল ইসলাম (৪৫) নামে এক ইউপি সদস্য নিহত হয়েছেন। নিহত নজরুল ইসলাম পাশের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ১৩ নম্বর ভবানীপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ভবানীপুর গ্রামের মৃত জাহান আলীর ছেলে।

লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা জানান, লক্ষ্মীপুরে ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার যাত্রী পুন্নি আক্তার ও খুশি আক্তার নামে দুই নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এক শিশুসহ আহত হন আরো তিনজন।

বিকেলে লক্ষ্মীপুর-ঢাকা-রায়পুর মহাসড়কের দালাল বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে রাখা হয়েছে। আহত শিশু শাহেদ, গাড়িচালক সোহেলসহ তিনজনকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী আনোয়ার হোসেন জানান, রায়পুর থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রাক ঘটনাস্থলে এসে মোড়ে অটোরিকশার পেছনে ধাক্কা দেয়। এ সময় অটোরিকশাটি ধুমড়েমুচড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই মারা যান খুশি আক্তার। আহত হন অন্য চারযাত্রী। পরে গুরুতর আহত পুন্নিকে ঢাকায় নেয়ার পথে মারা যান তিনি। নিহত পুন্নি সদর উপজেলার গঙ্গাপুর এলাকার শাহ আলমের স্ত্রী ও অপর নিহত খুশি একই এলাকার শাহজানের স্ত্রী।

সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: লোকমান হোসেন জানান, ঘাতক ট্রাকটি আটক করা হয়েছে। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।