যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ সংগঠনটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যুবলীগের ৭ম কংগ্রেস শেষে দ্বিতীয় অধিবেশনে ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে তাদের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

শেখ ফজলে শামস পরশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি ও যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার কালরাতে শেখ ফজলে শামস পরশের বাবা-মাও শহীদ হয়েছিলেন। তার ছোট ভাই ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা-১০ আসনের এমপি।

পরশ গত ১০ বছর রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর শেষে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকেও ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।

পরশ রাজনীতি থেকে নিজেকে সব সময় গুটিয়ে রাখতেন। ভাই ফজল নূর তাপস ব্যারিষ্টারি এবং রাজনীতিতে এলেও তিনি সবকিছু থেকে নিজেকে আলাদা রেখেছিলেন। এমনকি শেখ মনির পুত্র হওয়া সত্বেও তাকে রাজনীতির অঙ্গনে, কিংবা ক্ষমতা প্রভাব প্রতিপত্তির চৌহদ্দিতে তাকে খুব একটা দেখা যায়নি। সেই পরশই এবার নিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের দায়িত্ব।

কিছুদিন আগেও পরশকে যখন কেউ জিজ্ঞাসা করতেন, আপনি রাজনীতিতে আসছেন কিনা, আপনি রাজনীতি করবেন কিনা ? তখন পরশ বিনয়ের সঙ্গে বলতেন রাজনীতি আমার বিষয় নয় আমি পড়াশোনা করি এটিই আমার কাজ। কিন্তু সেই পরশ রাজনীতিতে আসার বিষয়ে কিভাবে রাজি হলেন তা নিয়ে কিছুটা কৌতুহল দেখা দিয়েছে সবার মনে।

যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে যখন নানা অভিযোগ এবং ঢাকা দক্ষিণ মহানগর যুবলীগের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো বাণিজ্যের অভিযোগে যুবলীগ প্রায় ইমেজ সংকটের তলানীতে পৌঁছে গেছে সেসময় পরশকে ডেকে নেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরশকে ডেকে নিয়ে বলেন যে, তার পিতার হাতে গড়া সংগঠনটির হাল সম্পর্কে পরশকে অবহিত করেন। এতে পরশ দুঃখিত হন এবং তিনি এই অবস্থা কাম্য নয় বলেও মনে করেন। জানা গেছে যে, এরপর পরই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হয় যুবলীগের নেতৃবৃন্দের। যুবলীগের নেতৃবৃন্দের বৈঠকে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুককে তার দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। ওইদিনই আলোচনায় এসেছিল শেখ ফজলে নূর তাপসের নাম এবং কয়েকটি গণমাধ্যম ফজলে নূর তাপসকে যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। যদিও তিনি জানান, এ ধরনের কোন কিছুর সম্ভাবনা নেই। অবশ্য জানা গেছে, গুজবের উৎস ছিল যুবলীগের বৈঠকের দিন তাপসের সঙ্গে কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাপসের সঙ্গে কথা বলার বিষয় ছিল যে পরশ যেন রাজনীতিতে আসে এবং যুবলীগের এই অস্তিত্ব সংকটে পরশ যেন হাল ধরে সে বিষয়টি তাপসকে বুঝান। এর পরপরই যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয় এবং সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ঘোষণা করা হয় চয়ন ইসলামকে এবং সদস্য সচিব করা হয় হারুন অর রশীদকে। এরপর তাপস তাঁর ভাইয়ের সাথে যুবলীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেন।

যেহেতু তাপস আইন পেশায় জড়িত। আইন পেশা ছাড়াও তিনি সংসদ সদস্য ও এলাকার অনেকগুলো কাজের সঙ্গে জড়িত। এই অবস্থায় যুবলীগের মত একটি বড় সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু যেহেতু ফজলুল হক মনির হাতে গড়া সংগঠন সেজন্য তা রক্ষায় তাদের পরিবারের দায়িত্ব রয়েছে বলেও তাপসকে বোঝান প্রধানমন্ত্রী। এই অবস্থায় তাপস কিছুটা নমণীয় হয়। তিনি পরশকে বোঝান। জানা যায়, এরপর পরশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দু-দফায় কথা বলেন। দু- দফায় তার দায়িত্ব নিলে যুবলীগ কিভাবে উপকৃত হবে, যুবলীগে কেন মেধা মননের ব্যক্তি দরকার এই বিষয়টা তাকে বোঝান। তখনই পরশ আনুষ্ঠানিকভাবে রাজি হন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, তাপসের স্বীকৃতি দেওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেন যে, পরশকেই যুবলীগের চেয়ারম্যান করা হবে। এরপর পরশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওবায়দুল কাদের।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।