দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রপাতে একই পরিবারের ৩ জনসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে সাতক্ষীরায় ৫, নড়াইল ও রংপুরে ২ জন করে, মাগুরা ও রূপগঞ্জে ১ জন করে।আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন :

সাতক্ষীরা : একই পরিবারের তিন সদস্যসহ সাতক্ষীরার দুই উপজেলায় বজ্রপাতে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলার রতনপুর এবং আশাশুনি উপজেলার বুধহাটায় বজ্রপাতের এসব ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়।

কালীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এস এম আজিজুর রহমান জানান, বেলা ১১টার দিকে উপজেলার রতনপুর ইউনিয়নের গড়ুইমহলের বাসিন্দা আদম আলীর বাড়ির টিনের চালে বজ্রপাত হলে ওই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন, আদম আলীর বড় ছেলে আল আমিন (২২), তার নবপরিনীতা স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন (১৮) এবং আদম আলীর ছোট ছেলে রবিউল ইসলাম (১৯)। আদম আলীকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে পরিদর্শক আজিজ জানান।

এদিকে কাছাকাছি সময়ে একই ইউনিয়নের বিজয়নগর গ্রামে বজ্রপাতে মুনছুর গাজী (৫০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। পরিদর্শক আজিজ বলেন, মুনছুর গাজী ক্ষেতে কাজ করছিলেন। বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আশাশুনি উপজেলার বুধহাটায় মাছের ঘেরে কাজ করার সময় বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু হয়। আশাশুনি থানার ওসি আবদুস সালাম জানান, বুধহাটা ইউনিয়নের মাদরা গ্রামের প্রদীপ সরদারের ছেলে জুয়েলসহ তিনজন মাছের ঘেরে কাজ করছিলেন। এমন সময় বজ্রপাত হলে ২৪ বছর বয়সী জুয়েল ঘটনাস্থলেই মারা যান।

নড়াইল : নড়াইলের কালিয়ায় মাছের ঘেরে বজ্রপাতে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় আরো ৪ জন আহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার কালিয়া পৌরসভার ভক্তডাঙ্গা বিলে এ ঘটনা ঘটে।

বজ্রপাতে নিহতরা হলেন, উপজেলার ছোট কালিয়া গ্রামের ফুলনাথ বর্মণের ছেলে নয়ন বর্মণ (২৩) ও খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের ফারুক সর্দার (২৫)।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, কালিয়া উপজেলার ভক্তডাঙ্গা বিলে প্রদীপ বর্মণের মাছের ঘেরে ৬ জন কৃষক কাজ করছিলেন। সকালের দিকে হঠাৎ বৃষ্টি হলে ঘেরের পাড়ে থাকা খুপড়ি ঘরে অন্যরা ফিরে গেলেও নিহত ওই কৃষক বাইরে ছিলেন। এ সময় প্রচন্ড শব্দে বজ্রপাত হতে থাকে। হঠাৎই ওই খুপড়ি ঘরের সামনে বজ্রপাত হলে ৬ জনই আহত হন। তাদের উদ্ধার করে কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ২ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। অপর চারজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

মাগুরা : মাগুরা সদর উপজেলার কুচিয়ামোড়া গ্রামে বজ্রপাতে একজন নিহত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে মাঠে কাজ করার সময় হঠাৎ বজ্রপাত ঘটলে সে মারা যায়। নিহতের নাম পঙ্কজ সাহা।

তারাগঞ্জ (রংপুর) : রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় আম বাগান পাহারার দেওয়ার সময় বজ্রপাতে দুজন মারা গেছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার সয়ার ইউনিয়ন এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন-উপজেলার কাজীপাড়া শাইপুকুর এলাকার বাসিন্দা অহিদুল মিয়া (৪৫) ও একই উপজেলার বালাপুর চড়কডাঙ্গা এলাকার রাশেদ আলী (২৫)।

অন্যদিকে আহতরা হলেন-আলমপুর ইউনিয়নের লিপা আক্তার (২৫), সয়ার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের সোহাগী আক্তার (৩৫), ইকরচালী ইউনিয়নের আতাউর (১৫), সয়ার কাজীপাড়া গ্রামের মিনুরা বেগম (৪৮) ও ইকরচালী চড়কডাঙ্গা এলাকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে রুমি (১৫)।

সয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আজম কিরণ জানান, রাতে আম বাগান পাহারা দেওয়ার সময় বজ্রপাত হয়। এ সময় দুজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ছাদের ট্যাংকি পরিষ্কার করতে গিয়ে বজ্রপাতে রকি মিয়া (১৫) নামে কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে উপজেলা বিশ^রোড এলাকা এ ঘটনা ঘটে। নিহত রকি মিয়া কিশোরগঞ্জ জেলার কফিয়াদি থানার ঘষিহাটা এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে। রকি মিয়া বর্তমানে উপজেলা বিশ^রোড এলাকার বাদশা মিয়ার বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে আসছিল। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানান, রকি মিয়া উপজেলার শাহ চন্দ্রপুরী হোটেলে ওয়েটার হিসেবে কাজ করতো। শুক্রবার দুপুরে ২ টার দিকে রকিসহ ৫ জন হোটেলের ছাদের ট্যাংকি পরিষ্কার করছিল। এসময় রকির উপর বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই রকির মৃত্যু হয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।