সর্বত্র আলোচনার ঝড় ব্ল্যাকমেইল করে অক্সফোর্ড হাইস্কুলের ২০-এর অধিক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনা। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ঘটনার মূলহোতা বিদ্যালয়ের সহকারী সিনিয়র শিক্ষক আরিফুল ইসলাম। কীভাবে দিনের পর দিন সে শিক্ষার্থীদের ধর্ষণ করেছে, বিষয়টি টের-ই পেলো না কেউ। এ নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, ধিক্কার, চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে অভিভাবকমহল ও এলাকাবাসীর মধ্যে।

চতুর আরিফ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাউকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে, কাউকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আবার কাউকে ব্ল্যাকমেইল করে দিনের পর দিন তার শয্যাসঙ্গী করেছে। এরমধ্যে কারো বিয়ে হয়ে গেছে, কেউ অবিবাহিত। আবার কেউ মেয়ের সর্বনাশের বিষয়টি টের পেয়ে গোপনে মেয়েকে নিয়ে এলাকা ছেড়েছেন। আবার অনেকেই ঘটনা টের পেলেও লোক লজ্জার ভয়ে চুপ থেকেছেন।

আর এই সুযোগটিই কাজে লাগিয়েছে লম্পট আরিফ। শুধু তাই নয়, এ ঘটনায় পাঁচ শিক্ষার্থী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। গোপনে আরিফ তাদের ওষুধ খাইয়ে বাচ্চা নষ্ট করেছে। এখানেই শেষ নয়, ঘটনা যাতে প্রকাশ না পায় এ জন্য আপত্তিকর ভিডিও এবং ছবি সংরক্ষণ করে ভুক্তভোগীকে ভয় দেখিয়ে সম্পর্ক বজায় রাখে আরিফ। র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই দিয়েছে সে।

এদিকে আরিফের জবানবন্দিতে ধর্ষিতা শিক্ষার্থীদের নাম প্রকাশ পাওয়ার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে অভিভাবক মহলে।

আরিফের লালসার শিকার কয়েক শিক্ষার্থীর ঘটনা-

র‌্যাব, এলাকাবাসী, ও অভিভাবকমহলের তথ্যমতে, আরিফের প্রথম শিকার ২০১৪ সালে ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রী। তার সঙ্গে পরিচয় হয় আরিফের। এবং ধীরে ধীরে ওই ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিভিন্ন সময়ে আরিফ ওই ছাত্রীকে তার ফ্ল্যাটে ১০ থেকে ১২ বার ডেকে নেয়। এরমধ্যে ৪ থেকে ৫ বার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সম্পর্ক বজায় রাখে আরিফ। দুইবার ওই শিক্ষার্থী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরে দুইবার পিল খাওয়ায় আরিফ। বর্তমানে ওই ছাত্রীর বয়স আঠারো।

আরেক ছাত্রী বর্তমানে বিবাহিত। সে আরিফের দ্বিতীয় শিকার। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে আরিফ। ৯ম শ্রেণিতে পড়াকালীন তার সঙ্গে কৌশলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে আরিফ। এরমধ্যে ২ থেকে ৩ বার ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে সেও অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরে আরিফ বাসায় তাকে ওষুধ খাইয়ে বাচ্চা নষ্ট করে। তবে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে বিয়ের পরও তিন্নি নামের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে আরিফ।

তমার (ছদ্মনাম) বর্তমানে বয়স ১৭। সে অবিবাহিতা। স্কুলে পড়াকালীন তাকে আরিফ ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে। এবং স্কুলের ৩য় তলায় ছাদে নিয়ে প্রায়ই আলিঙ্গন ও চুমু দিতো। মাঝে মধ্যে তমার বাসায়ও যেত আরিফ। এরমধ্যে দুইবার তমাকে ধর্ষণ করে সে।

১৬ বছরের আরেক ছাত্রীকে ২০১৭ সাল থেকে বাসায় গিয়ে পড়াতো আরিফ। এরমধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে অসংখ্যবার ধর্ষণ করেছে সে। এরমধ্যে একবার অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরে তাকে এমএম কিট ট্যাবলেট খাওয়ায় আরিফ। ২০১৮ সালে যাত্রাবাড়ীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে তার গর্ভপাত ঘটানো হয়।

প্রসঙ্গত, সিদ্ধিরগঞ্জে মিজমিজি মাদ্রাসা রোড এলাকায় অক্সফোর্ড হাইস্কুলের ২০-এর অধিক শিক্ষার্থীকে ব্ল্যাকমেইলিং করে ধর্ষণের অভিযোগে বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের সহকারী সিনিয়র শিক্ষক আরিফুল ইসলাম ও তাকে সহায়তাকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১১। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলায় আরিফ ৬ দিন ও রফিকুল ইসলাম একদিনের রিমান্ডে রয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।