পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির কারনে কুষ্টিয়ার শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে নদীগর্ভে চলে গেছে প্রায় ৫০মিটার। এতে হাজার হাজার মানুষ আতংকে দিনপাত করছে। পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় যে কোন মুহুর্তে নদীর পানি এলাকায় প্রবেশ করার আশংকায় সকলে আতংকিত।
সেনাবাহিনীর তত্ববধানে নির্মিত ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই বাঁধটি এক বছরও টিকল না। এদিকে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীর পানি। এতে জেলার নিম্নাঞ্চলের ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি আরো বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পদ্মার পানি বিপদসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
গত ১২ ঘণ্টায় এ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে আরও তিন সেন্টিমিটার, যা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। বুধবার কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বুধবার কুষ্টিয়ার কয়া ইউনিয়নের কালোয়া গ্রামে শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধের ৩০ মিটার ধসে গেছে। সকাল ৯টায় কয়া ইউনিয়নের কালোয়া অংশে হঠাৎ করে বাঁধে ভাঙন শুরু হয়। মুহূর্তেই বাঁধের ৩০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়। এ সময় বাঁধের ওপর বসবাসরত কয়েকশ পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।
এ বাঁধটি নির্মাণ নিয়ে শুরু থেকে অভিযোগ করে আসছিলেন জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা। ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালের ৩০ জুন অসম্পূর্ণ প্রকল্পকে সম্পূর্ণ দেখিয়ে কাগজে-কলমে প্রকল্পটি হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের অভিযোগ, বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের নির্ধারিত পরিকল্পনাসহ নকশা লঙ্ঘন, অর্থ অপচয় এবং বরাদ্দকৃত টাকা প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় না করে লুটপাট করা হয়েছে, এজন্য ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঁধটি এখন ধ্বংসের মুখে। স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধে ২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর প্রথম ভাঙন শুরু হয়। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ওই সময় বাঁধের ৫০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি রক্ষায় এ বাঁধ নির্মাণ করা হলেও বাস্তবে কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর একই অংশে হঠাৎ করে আবারও বাঁধের ভাঙন শুরু হয়। দেখতে দেখতে মাত্র ৪০ মিনিটের মধ্যে বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে চলে যায়। সর্বশেষ বুধবার বাঁধের ৩০ মিটার ধসে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধের কালোয়া বাজার এলাকার আগে যে স্থানে বাঁধ ধসে গেছে সেখানে আন্ডার গ্রাউন্ড আর্থ পরিস্থিতির কারণে ডিজাইনে শাল বুল্লি পুঁতে শ্লপ তৈরির নির্দেশনা ছিল। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেই কাজটি না করার ফলেই ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। বাস্তবে বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে নদী পাড়ের বাসিন্দারা জানান, এই বাঁধ আমাদের অভিশাপ ডেকে এনেছে। আমাদের বাড়ি নদী থেকে অনেক দূরে ছিল। কিন্তু ঠিকাদাররা কাজ করার সময় বাড়ির সীমানা থেকে কয়েক মিটার কেটে ফেলেছে। যার ফলে নদী একেবারে ঘরের কাছে চলে এসেছে। বাঁধ নির্মাণের আগেই ভালো ছিলাম, বাঁধ নির্মাণে আরও বেশি ক্ষতি হয়েছে আমাদের।
শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দীন খান জানান, শিলাইদহ, কোমরকান্দি ও কল্যাণপুর এলাকায় মাঠ ও কয়েকটি বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। পানি না কমলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে। নদী পাড়ের বাসিন্দারা উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পীযূষ কৃষ্ণ কুন্ডু জানান, কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধের কালোয়া এলাকার কিছু অংশ ভেঙে গেছে। ভেঙে যাওয়া এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভাঙনকবলিত স্থানে ৯ হাজার জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। ভাঙনরোধে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় আরও ২হাজার জিওব্যাগ ফেলা হবে। এদিকে গত ২৪ঘন্টায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দুটি ইউনিয়ন পুরো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় মানুষের মাঝে আতংক কাজ করছে। এদিকে শাখা নদীর গড়াই নদীর কুলবর্তি বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করায় জনগনের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
বিজ্ঞাপন
