এক সপ্তাহ পার হলো। এখনো পুলিশ উদ্ঘাটন করতে পারেনি কুমিল্লায় আলোচিত মেহেদী হত্যার রহস্য। ঘটনার পরদিন জিজ্ঞাসাবাদের একজনকে আটক করা হলেও এখন পর্যন্ত আর কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। মামলার তদন্তেও দৃশ্যমান তেমন অগ্রগতি নেই।

যদিও পুলিশ বলছে, তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। অচিরেই দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

এদিকে, সন্তানের শোকে পাগলপ্রায় বাবা-মায়ের কান্না থামেনি এখনো। হত্যায় জড়িতরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় সামান্য সান্ত্বনাটুকুও খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। মেহেদীর বাবা-মা ও স্বজনদের দাবি, দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।

গত ১৯ অক্টোবর শনিবার কুমিল্লা সদর উপজেলার সাতোরা চম্পকনগর গ্রামের প্রবাসী আলমগীর হোসেনের ছেলে মেহেদী হাসান রিফাতকে (১০) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ওইদিন রাত ১০টার দিকে বাড়ির পাশের ডোবা থেকে তার লাশ উদ্ধার করেন স্বজনরা।

মেহেদী স্থানীয় ‘নর্থ সাউথ চাইল্ড একাডেমি’র তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। ওই ঘটনায় মেহেদীর চাচা জাহাঙ্গীর হোসেন বাদী হয়ে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হৃদয় নামে পাশের বাড়ির এক যুবককে আটক করে।

সরেজমিনে সাতোরা চম্পকনগর গ্রামে মেহেদীদের বাড়িতে গিয়ে চোখে পড়ে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। মেহেদীর পড়ার টেবিলের পাশে খাটে শুয়ে আছেন নির্বাক মা জেসমিন আক্তার। পাশে বসা মেহেদীর বাবা আলমগীর হোসেন। ছেলে হারানোর সংবাদ পেয়ে পরদিনই সৌদিআরব থেকে দেশে ফিরে আসেন তিনি। আদরের ধন হারিয়ে শোকাতুর এ দম্পতি মুর্ছা যাচ্ছেন বারবার। কোনো সান্ত্বনাই তাদের ছেলে হারানোর বেদনা ভোলাতে পারছে না।

নিহত রিফাতের মা জেসমিন আক্তার বলেন, ‘আমার আদরের নিষ্পাপ ছেলেকে নির্মমভাবে কুপিয়ে-কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। কী দোষ ছিল তার? আমি এর বিচার চাই। খুনির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

তাঁর ধারণা, কিছুদিন পূর্বে বাসায় চুরি হওয়ার ঘটনার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘মাস দুয়েক আগে ঘরে দুইবার চুরি হয়। একবার মোবাইল ফোন ও আরেকবার স্বর্ণালংকার নিয়ে যায় চোর। আমরা পাশের বাড়ির হৃদয়কে সন্দেহ করে জিজ্ঞাসাবাদ করি। পরে সে বাড়িতে এসে আমাদেরকে হুমকি দিয়ে যায়। হৃদয় এই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে।’

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হৃদয়ের পরিবারের সদস্যরা। হৃদয়ের বোন তাহমিদা আক্তার বলেন, ‘চুরির ঘটনা নিয়ে মেহেদীর মা আমাদেরকে অনেক অপমান করেছেন। আমাদের ঘরে এসে তল্লাশি পর্যন্ত চালিয়েছেন। কিছুই খুঁজে পাননি। আমি বলেছি, আমার ভাই এমন কাজ করতে পারে না। তারা অনেকভাবেই চেয়েছে ভাইকে চোর প্রমাণ করতে। শেষে এখন এ ঘটনায় মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে। আজ সাত দিন ধরে আমার ভাই জেলে। কোনো অপরাধ না করেও বিনা কারণে জেল খাটছে।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুমিল্লা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (ইন্সপেক্টর অপারেশন) এস এম আরিফ বলেন, ‘মামলার পরপরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হৃদয়কে আটক করা হয়েছে। এখনো তদন্ত চলছে। তদন্তে হত্যাকাণ্ডের রহস্য অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে। ঘটনার দিন রাস্তায় কে ছিল, হত্যায় কার কী ভূমিকা ছিল- তা অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। আশা করছি খুব দ্রুত আসামিদের আটক করে আদালতে সোপর্দ করতে পারবো।’

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল হক বলেন, ‘এটি একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড। খুব গুরুত্বসহকারে পুলিশ বিষয়টি তদারকি করছে। রহস্যও উন্মোচনের পথে। এরইমধ্যে অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিছু রহস্যও বের হয়ে আসছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এটুকু বলতে পারি, বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।