রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার বাগপাড়া গ্রামের আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী এক নেতা কর্তৃক পুলিশের স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ওই পুলিশের স্ত্রী কালুখালী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ নেতার নাম শাহ আজিজ। সে কালুখালীর রতনদিয়া ইউপির বাগপাড়া গ্রামের বাউল মন্ডলের পুত্র ও রতনদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক।

থানায় অভিযোগকারী ঐ পুলিশের স্ত্রী জানায়, ২৮ মে বৃহস্পতিবার শাহ আজিজ তারবাড়ীতে ঢুকে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে সে চিৎকার দেয়। এসময় শাহ আজিজ পালিয়ে যায়।

ওই পুলিশের স্ত্রী আরো জানায়, ইতিপূর্বে শাহ আজিজ তাকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কু প্রস্তাব পাঠায়। সে ওই প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় তাকে জোর পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। ঘটনার পরদিন ২৯ মে ওই মহিলা কালুখালী থানার ওসি এস এম আবু ফরহাদের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের এককপি স্থানীয় সাংবাদিক জুলফিকার আলীর হাতেও প্রেরণ করেন বলে জানান ওই মহিলা।

সরেজমিন গেলে স্থানীয়রা জানায়, শাহ আজিজ নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দাপটের সাথে বেড়ান। আসলে সে কোন পত্রিকায় লেখালেখি করে না। তাছাড়া স্থানীয় আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় তাকে সবাই ভয় পায়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, শাহ আজিজ আশির দশকে বাংলাদেশ হাট নেছারিয়া দাখিল মাদরাসায় ছাত্র শিবিরের রাজনীতি করতো। এসময় ছাত্র শিবিরের সভাপতি পদে নির্বাচন করে সে সাদেকুর রহমানের নিকট পরাজিত হন। তখন থেকেই আজিজ লম্পট প্রকৃতির। ওই সময় এক মেয়েকে স্ত্রী পরিচয়ে ৩ দিন তার বাড়ীতে রেখে ধর্ষণ করে শাহ আজিজ। পরবর্তীতে সে আরো ৩ মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে। পরে ৩ মেয়ের অবিভাবককে অর্থদন্ড দিয়ে মুক্তি পায় আজিজ। বর্তমানে প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা হওয়ায় তা অতীত ইতিহাস  সব চাপা পরে আছে।

এ সংবাদ শুনে উপজেলা মহিলা পরিষদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। উপজেলা মহিলা পরিষদের সাধারন সম্পাদক শান্তনা রানী বিশ্বাস জানান, আমরা সরেজমিন ঘুরে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। কালুখালী থানা পুলিশও ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর ওই মহিলার নিকট থেকে লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করেছে। প্রাথমিক তদন্তের সাথে অভিযোগের সত্যতা মিল রাখার জন্য থানার কম্পিউটার থেকেই অভিযোগপত্রটি লেখা  হয়। তার পরও অভিযোগটি কেন মামলা আকারে গৃহিত হয়নি তা বুঝতে পারছি না। তবে ঈদৈর ছুটি শেষ হলে আমরা এব্যাপারে আদালতের শরনাপন্ন হবো।

অভিযোগকারী পুলিশের স্ত্রী জানায়, অভিযোগ দায়েরের পর শাহ আজিজ তাকে অভিযোগটি প্রত্যাহারের হুমকী দিচ্ছে। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে অভিযোগকারী পুলিশের স্ত্রী ও তার সন্তানেরা। তারা এ ব্যাপারে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

এ ব্যাপারে আওয়ামীলীগ নেতা শাহ আজিজ ধর্ষণে চেষ্টা্র অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অভিযোগকারী ঐ মহিলা চরিত্রহীন সে অসামাজিক ক্রিয়াকলাপ করে বেড়ায় এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ আনে। প্রতিবাদ করতে গিয়েই আমার বিরুদ্ধে এই কালিমালিপ্ত করার ষড়যন্ত্র করছে।

উপজেলা মহিলা পরিষদ নেত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আওয়ামীলীগের এই নেতা মহিলা পরিষদ নেত্রীর চরিত্রও পুলিশের ঐ স্ত্রীর মত বলে জানান এবং মহিলা পরিষদ নেত্রীও অসামাজিক ক্রিয়াকলাপ করে বেড়ানোর পালটা অভিযোগ করেন।

এ ব্যাপারে কালুখালী থানার ওসি এস এম আবু ফরহাদ জানান,২৮ ফেব্রুয়ারী এলাকার ছেলেদের মোটরসাইকেল চালানো নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয় খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। আওয়ামীলীগের ঐ নেতার সাথে এই নিয়ে কথাকাটা হয়। কথাকাটাকাটির জের ধরেই ঐমহিলা পরের দিন ২৯ মে থানায় ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন।

লিখিত অভিযোগ পেলেও অভিযোগটি মামলা আকারে কেন গ্রহণ করেননি এমন প্রশ্নে থানার এই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, যেহেতু অভিযোগটি মিথ্যা তাই মামলা হিসেবে দায়ের করা হয়নি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।