সরকারি চাকরিজীবীদের মত অন্য বেসরকারি খাতের কর্মীদের পেনশনের আওতায় আনতে গত কয়েক বছর ধরে আলোচনা শোনা গেলেও কার্যকর সুফল মেলেনি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী তিন বছরের মধ্যে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে যাচ্ছে সরকার।

কী উপায়ে এটি বাস্তবায়ন হবে, কারা এর আওতাভুক্ত হবেন এ বিষয়ে একটি রূপরেখা আগামী বাজেটে তুলে ধরতে পারেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

সূত্র জানিয়েছে, সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে খসড়া রূপরেখা তৈরির জন্য গত এপ্রিলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি একটি প্রতিবেদন তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে।

বর্তমানে কেবল সরকারি চাকরিজীবীরাই পেনশন সুবিধার আওতায় রয়েছেন। সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু হলে এর বাইরে বেসরকারি খাতে নিয়োজিত কর্মীরাও পেনশনের আওতায় আসবেন। পেনশনের আওতায় থাকা প্রত্যেকের একটি আলাদা পরিচিতি নম্বর থাকবে। কর্মী তার আয় থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পেনশন তহবিলে জমা দেবেন।

এতে অর্থ দেবেন নিয়োগদাতাও। সরকার ওই অর্থ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করবে। বিনিয়োগকৃত লভ্যাংশ থেকে পেনশনধারীকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যিনি বেশি অর্থ জমা দেবেন, তিনি পেনশনে বেশি অর্থ ফেরত পাবেন।

তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই একটি নীতিমালা থাকবে। একই ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করলেও তার নির্দিষ্ট পরিচিতি নম্বর থাকায় কার্যক্রম চলমান থাকবে। কেউ একটি নির্দিষ্ট সময় বেকার থাকলে ওই সময় তিনি নিজে অর্থ পরিশোধ করবেন।

অবশ্য তিনি বলেন, এটি কী উপায়ে বাস্তবায়ন করা যাবে, কিংবা এর আওতা কতটুকু হবে – তা সরকারের নীতিগত অনুমোদনের পর ঠিক হবে। তিনি বলেন, ভারতের মত দেশেও এটি বাস্তবায়ন হতে প্রায় দুই দশক লেগেছে। অবশ্য বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এটি বাস্তবায়ন করা কঠিন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, উদ্যোগটি ভালো। কিন্তু এটি ‘সার্বজনীন’ করা খুব সহজ নয়।

বর্তমানে চাকরিজীবীদের যে অংশটি (সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত) পেনশন সুবিধার আওতায় আছেন, তা কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মাত্র শতকরা পাঁচ শতাংশ। মোট শ্রমশক্তির বাদবাকী ৯৫ শতাংশই বেসরকারি খাতে নিয়োজিত।

এর মধ্যে নিয়োগপত্র, নিয়মিত বেতন, ছুটিসহ নিয়মের মধ্যে রয়েছে ১০ শতাংশ। অর্থাত্ এই চাকরিজীবীরাও আনুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। বাকি বিশাল অংশই অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত। এক্ষেত্রে নিয়োগপত্র, নিয়মমাফিক বেতনসহ চাকরির সুবিধা অনুসরণ করা হয় না।

এমন উপলব্ধি থেকেই গত কয়েক বছর ধরে সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করার ইচ্ছা প্রকাশ করে আসছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সর্বশেষ গত বাজেট বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন, সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারি পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত সকল কর্মজীবী মানুষের জন্য একটি টেকসই সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের কাজ এ অর্থবছরেই শুরু করার আশা রাখি।

দেশের মোট বয়স্ক জনসংখ্যার মধ্যে পেনশনভোগীর সংখ্যা অতি সামান্য। শুধু সরকারি কর্মচারী এবং কিছু বেসরকারি সংস্থার ৭ থেকে ৮ লাখ পরিবার বর্তমানে নিয়মিত পেনশন পেয়ে থাকেন।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই কাজ শুরু করা যায়নি। দেখা মেলেনি এ সংক্রান্ত কোনো রূপরেখাও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করার জন্য কাঠামোগত সংস্কার দরকার, যা সময়সাপেক্ষ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।