মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সহকারি শিক্ষিকাকে যৌন নিপীড়নসহ হয়রানি অভিযোগ উঠেছে। ওই প্রধান শিক্ষক কয়েক ধাপে স্কুলের দপ্তরিকে দিয়ে সহকারী শিক্ষিকাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এমনকি সহকারী শিক্ষিকাকে বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তাব দেন প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকের এমন হয়রানির কারণে সহকারী শিক্ষিকা গত সাতদিন ধরে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

এমন হয়রানি থেকে বাঁচতে ওই শিক্ষিকা কুলাউড়ার ইউএনও এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এনটিআরসির মাধ্যমে উপজেলার তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পান সহকারি শিক্ষিকা। যোগদানের পর শিক্ষিকার এমপিভুক্তির জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদ কাগজাদি ও ফাইল রেডি করতে যত টাকা খরচ লাগবে সেই টাকা দেবার প্রতিশ্রুতি দেন। বিনিময়ে তার বিয়ের প্রস্তাবে রাজি হতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে প্রধান শিক্ষক তার রুমে ডেকে নিয়ে ওই শিক্ষিকাকে কুরুচিপূর্ণ, অনৈতিক প্রস্তাবনা দিয়ে যৌন হয়রানি করে আসছেন। প্রধান শিক্ষক ওই শিক্ষিকাকে তার বাড়িতে যাওয়ার জন্যও প্রস্তাব দেন।

প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদ তার ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে বিভিন্ন সময় তার পরিবারের সদস্য ও স্কুলের দপ্তরির মাধ্যমে ওই শিক্ষিকাকে বিয়ে করার প্রস্তাবনা দেন, কিন্তু শিক্ষিকা সেই প্রস্তাবে রাজি হননি। এরপর ওই শিক্ষিকাসহ আরও দুইজন শিক্ষিকাকে এমপিও করানোর কথা বলে ৬০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন প্রধান শিক্ষক।

এ বিষয়টি স্থানীয় এলাকায় চাউর হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধমে সমালোচনার ঝড় উঠে। প্রধান শিক্ষকের এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিকার চেয়ে ওই শিক্ষিকা কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই শিক্ষিকা জানান, আমি বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদ আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে আসছেন। অনেকদিন সহ্য করেছি। বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত অভিযোগ করেছি। এ ঘটনার সঠিক সমাধান না হলে আমি স্কুলে যাবো না। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।

শিক্ষিকার বাবা জানান, প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন আচরণে আমার মেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আছে। সপ্তাহ খানেক থেকে সে স্কুলে যাচ্ছে না। একদিন এমপিও করার স্বাক্ষরের জন্য মৌলভীবাজার শিক্ষা অফিসে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বাড়ি আসতে দেরি দেখে আমি নিজে মৌলভীবাজার গিয়ে রাত ১১টায় আমার মেয়েকে বাড়ি নিয়ে আসি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আমার মেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

এ বিষয়ে তেলিবিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নোমান আহমদ বলেন, আমি এসব বিষয়ে কিছু জানি না। বিয়ের কিংবা বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তাবও দেইনি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার জানান, ওই প্রধান শিক্ষক খারাপ প্রকৃতির লোক। তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আগেও ছিলো। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আবুল লাইছ জানান, প্রধান শিক্ষক বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য অভিযোগটি থানায় পাঠিয়েছি। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।