এনটিআরসিএর মাধ্যমে সুপারিশ পাওয়া শিক্ষকদের যোগদানের তারিখ থেকে এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নবসৃষ্ট পদের আদেশ জারির পর শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নবসৃষ্ট পদে এমপিওভুক্তি নিয়ে কথা বলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যপক ড. মো আবদুল মান্নান।

তিনি বলেন, এটা মনে হয় বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত। এখন পর্যন্ত শিক্ষকরা স্কুলগুলো/কলেজগুলোতে যোগদান করেন এবং দীর্ঘ সময় চাকরি করার পরে যেই মাসে এমপিওভুক্ত হওয়ার ওই মাসেই এমপিওভুক্ত হন। মানে ভুতাপেক্ষ কাউকে এমপিওভুক্ত করা হয় না। এই প্রথম মনে হয় এমনটা হলো। এতে বুঝা যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় কতটা সহানুভূতিশীল এবং আন্তরিক শিক্ষকদের ব্যাপারে।

ড. মো আবদুল মান্নান বলেন, এখন আর সমস্যা থাকলো না। এখন যদি একমাস বা ‍দুমাস পরেও তারা এমপিওভুক্ত হয় তাহলে যেদিন থেকে যোগদান করেছেন সেদিন থেকে এমপিওভুক্ত করা হবে।

তিনি বলেন, যেসব শিক্ষকদের ব্যাপারে এ ঘটনা ঘটেছে আমরা তাদের তথ্য নিচ্ছি। এখন আমরা দেখব এই শিক্ষকদের সংখ্যা কত? এবং তাদের নিয়োগ সঠিকভাবে হয়েছে কিনা। এবং আমাদের কাছে যে তথ্যগুলো আসছে সেগুলো পরিষ্কারভাবে লিখে আমরা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিবো এমপিওভুক্ত করার ব্যাপারে।

এর আগে গত ৩০ মে স্কুলের ৯টি এবং কলেজের ৭টি পদে নবসৃষ্ট পদে নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির আদেশ জারি করা হয়। যদিও গত ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ৫ শতাধিক শিক্ষক এনটিআরসিএর সুপারিশ পেয়ে নবসৃষ্ট বিভিন্ন পদে যোগদান করেছেন।

সে আদেশের প্রেক্ষিতে বেসরকারি কলেজগুলোতে নতুন এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো অনুযায়ী নবসৃষ্ট পদে নিয়োগ ও এমপিওভুক্তির জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়, নির্ধারিত আর্থিক বছরের আগে এসব পদে নিয়োগের কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না। তাই, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নবসৃষ্ট পদে নিয়োগপ্রাপ্ত যারা এনটিআরসিএর সুপারিশ পেয়ে যোগদান করেছেন তাদের এমপিও আবেদন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে অগ্রায়ন করছিলেন না।

এসব শিক্ষকদের কথা চিন্তা করে মন্ত্রণালয় এনটিআরসিএর মাধ্যমে সুপারিশ পাওয়া শিক্ষকদের যোগদানের তারিখ থেকে এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, নিম্ন মাধ্যমিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে সহকারী শিক্ষক পদে এবছরই অর্থাৎ ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকেই নিয়োগ ও এমপিও প্রদান করা হবে। এ পদে কর্মরত শিক্ষকরা ১০ কোডে বেতন ভাতা পাবেন। এছাড়া কলেজের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের প্রদর্শক ও একই বিষয়ে ল্যাব সহকারীদেরও ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকেই নিয়োগ ও এমপিও প্রদান করা হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের প্রদর্শকরা ১০ কোডে এবং একই বিষয়ের ল্যাব সহকারীরা ১৮ কোডে এমপিও পাবেন।

এদিকে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিকের ভৌতবিজ্ঞান এবং মাধ্যমিকের ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষকরা ২০১৯-২০২০ অর্থবছর থেকে এমপিওভুক্ত হতে পারবেন। এ দুই বিষয়ের শিক্ষকরা ১০ কোডে এমপিও পাবেন। এছাড়া কলেজের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এবং ২য় পদের ল্যাব সহকারীদেরও ২০১৯-২০২০ অর্থবছর থেকে নিয়োগ দেয়া যাবে।

এছাড়া ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কলেজের ৪র্থ পদের প্রদর্শক, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষক এবং নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব সহকারীদের নিয়োগ দেয়া যাবে। এক্ষেত্রে কলেজের ৪র্থ পদের প্রদর্শকরা ১০ কোডে, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষকরা ১০ কোডে এবং নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাব সহকারীরা ১৬ কোডে এমপিও পাবেন।

২০২১-২০২২ অর্থবছরে স্কুলে ৩টি ও কলেজের ১টি পদে নিয়োগের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নিম্ন মাধ্যমিকের বাংলা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক, নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিকের নৈশ প্রহরী এবং নিম্ন মাধ্যমিকের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ২০২১-২০২২ অর্থবছর থেকে নিয়োগ ও এমপিও পাবেন। এছাড়া কলেজের ৩য় পদের ল্যাব সহকারীরা একই বছর থেকে নিয়োগ ও এমপিও পাবেন। এক্ষেত্রে নিম্ন মাধ্যমিকের বাংলা বিষয়ের সহকারী শিক্ষকরা ১০ কোডে, নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিকের নৈশ প্রহরীরা ২০ কোডে এবং নিম্ন মাধ্যমিকের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ২০ কোডে এমপিও পাবেন। এছাড়া কলেজের ৩য় পদের ল্যাব সহকারীরা ১৮ কোডে বেতন পাবেন।

এদিকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিকের চারু ও কারুকলা শিক্ষকরা এবং কলেজের ৪র্থ পদের ল্যাব সহকারীরা নিয়োগ পেয়ে এমপিভুক্ত হতে পারবেন। এক্ষেত্রে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিকের চারু ও কারুকলা শিক্ষকরা ১০ কোডে এবং কলেজের ৪র্থ পদের ল্যাব সহকারীরা ১৮ কোডে এমপিও পাবেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।