বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকা চূড়ান্ত করা হলেও প্রকাশ করার সময় এখনো কোনো সূত্রই সঠিক করে বলতে পারছে না। কেউ বলছে বাজেট পাশের পরপরই, আবার কেউ বলছে এখনো যাচাই বাছাই চলছে। কিন্তু বাজেটতো পাশ হলো এখনোতো প্রকাশ হয়নি। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে যেকোনো সময় এ তালিকা প্রকাশ হতে পারে। এদিকে ননএমপিও শিক্ষকরা অধীর আগ্রহে বসে আছে কখন আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে শেষ মুহূর্তের নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে তারা। বিশেষ করে হাওর, চরাঞ্চল, পাহাড়ি ও অনগ্রসর এলাকার কিছু প্রতিষ্ঠানকে এমপিওর আওতায় আনতে নীতিমালার কঠোর শর্ত কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। এ ছাড়া কঠোর শর্তের বেড়াজালে বাদ পড়া উপজেলায় অন্তত একটি করে প্রতিষ্ঠান এমপিও দিতে শর্ত শিথিল করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।

২০১০ সালের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় রেখেই নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওর আওতায় আনার কাজ চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত ২০১৮ সালে জারি করা নীতিমালাকে প্রাধান্য দিয়ে তালিকা করা হয়েছে। তালিকা করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনা বা প্রভাবশালী মহলের তদবিরকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি বলে দাবি করেন তালিকা চূড়ান্ত করা যাচাই-বাছাই কমিটির একাধিক কর্মকর্তা। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, পেশাদারিত্ব ও দায়িত্ববোধের দিক থেকে শতভাগ সৎ থেকে তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত বা তালিকায় সংযোজন-বিয়োজন করার দায়িত্ব এখন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।

অপর দিকে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, নীতিমালার কঠোর শর্তের কারণে যেন সুবিধাবঞ্চিত বা অনগ্রসর এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদ না পড়ে, তা বিবেচনায় রেখে নীতিমালার কোন কোন শর্ত শিথিল করা হতে পারে। এ ছাড়া নীতিমালার শর্তের কারণে যেসব উপজেলায় কোন প্রতিষ্ঠান যোগ্য বলে চিহ্নিত করা যায়নি, সেসব উপজেলায় শর্ত শিথিল করে হলেও অন্তত একটি প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সিদ্ধান্ত ও অনুমোদন নেয়া হবে। এ ছাড়াও প্রভাবশালী মহলের চাপের বিষয়টিকেও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। কারণ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে প্রশ্নোত্তরের সময় অনেক এমপি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ব্যাপারে বারবারই প্রশ্ন করছেন শিক্ষামন্ত্রীকে। মন্ত্রীর কাছে সম্পূরক প্রশ্নেও এমপিওভুক্তির ব্যাপারে নানা প্রস্তাব দিচ্ছেন তারা। এসব বিষয় মাথায় রেখেই তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।

চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে মন্ত্রীর সাথে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা এবং যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে । এ বৈঠকের পরই তালিকাটি সরকারের শীর্ষপর্যায়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হতে পারে। সেখানেই চূড়ান্ত হবে তালিকা। নীতিমালার সব শর্তানুযায়ী যোগ্য সব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির জন্য মন্ত্রণালয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জানিয়ে সূত্র বলে, বাজেটে এমপিওর জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত ৯ বছর এমপিও দেয়া হয়নি। বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।

গত কয়েক বছর ধরে এমপিওর দাবিতে আন্দোলনরত নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ মাহমুদন্নবী ডলার বলেন, আমাদের বিশ্বাস সরকার আমাদের দাবি মেনে নেবে এবং নির্বাচনের আগে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে। আমাদের দাবি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব ক’টি প্রতিষ্ঠানই এমপিওর আওতায় নেয়া। প্রয়োজনে ধাপে ধাপে করা যেতে পারে। তবে, সবগুলোর গেজেট করা যেতে পারে। বেতনও ধাপে ধাপে দেয়া হোক। কারণ ১৭-১৮ বছর ধরে বহু শিক্ষক বিনা বেতনে চাকরি করছেন। তাদের বয়স শেষের দিকে। এমপিও না দিলে এ সব শিক্ষক ভয়ানক ক্ষতির মুখে পড়বেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।