নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা; সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দু’বছর মেয়াদি প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা চালুর জন্য স্বল্পমেয়াদি (১-২ বছর) ও মধ্যমেয়াদি (৩-৪ বছর) বেশ কিছু প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। স্বল্পমেয়াদি কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে সকল অংশীজনের মতামত গ্রহণ করে দু’বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা প্রচলনের পরিকল্পনা প্রণয়ন, চার বছর বয়সী শিশুর জন্য শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও শিখন সামগ্রীর উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অন্য সংশ্নিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন।
বর্তমান অবকাঠামোগত বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মোট পাঁচ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দু’বছর মেয়াদে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা।
আর মধ্যমেয়াদি কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দু`বছর মেয়াদি এই শিক্ষা চালু করা, প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ করা ও তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া; কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকের সহায়তায় শিশুদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিচর্যার বিষয়টি নিশ্চিত করা। চার বছর বয়সী শিশুদের অধিকতর যত্ন প্রয়োজন হয়, তাই একজন করে যত্নকারী কর্মী নিয়োগ করা
মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক স্তরের ক্লাসরুম উপযোগী করে তুলতে সারাদেশে নতুন করে আরো ৩০ হাজার শিশু উপযোগী শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হবে। ৬৫ হাজার বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে কোমলমতি শিশুদের বয়স উপযোগী কারিকুলামও প্রণয়ন করা হচ্ছে। এ জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে (এনসিটিবি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা হবে ২ বছর মেয়াদি। এর ফলে প্রথম শ্রেণিতে উঠতে শিশুকে ২ বছর পড়তে হবে। পেরোতে হবে দুটি শ্রেণি। ‘শিশু শ্রেণি’ নামে এই ক্লাসে ভর্তির জন্য শিশুদের বয়স পাঁচের বদলে চার নির্ধারণ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন চেয়ে একটি সার-সংক্ষেপ পাঠিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে প্রথম শ্রেণিতে পড়ার আগে এক বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা রয়েছে। এর বদলে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার সময়সীমা বাড়িয়ে দুই বছর করা হচ্ছে। শুরুতে দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মোট পাঁচ হাজার বিদ্যালয়ে দুই বছরের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হবে। ২০২২ সালের মধ্যে দেশের সব বিদ্যালয়ে কার্যকর হবে তা।
সার-সংক্ষেপে বিভিন্ন দেশে দু’বছরে মেয়াদি এই শিক্ষার উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়, এশিয়ার মধ্যে জাপান, কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর ও ভারতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দু`বছর মেয়াদি। ইউনেস্কোর ২০১৬ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা উন্নত বিশ্বের দেশসহ ১০ শতাংশ দেশে তিন বছর মেয়াদি এবং ৪৯ শতাংশ দেশে দু`বছর মেয়াদি। দু`বছর মেয়াদি এই শিক্ষা চালুর যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়, সরকারিভাবে বাংলাদেশে দু`বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক স্তর চালু না থাকায় বেসরকারি উদ্যোগে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্রসার ঘটছে। এডুকেশন ওয়াচ ২০১৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী- বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনে প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার ব্যয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৯ গুণ বেশি।
সার-সংক্ষেপে বলা হয়, গত বছর (২০১৯) মাঠ পর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এলাকায় চার বছরের বেশি বয়সী শিশুর সংখ্যা প্রায় ৩৩ লাখ ৮ হাজার ১৫৪। নতুন ক্লাস চালু হলে এ শিশুরা সেখানে ভর্তি হবে। ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ২৪১ শিশু প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত আরও একটি নতুন শ্রেণি যুক্ত করা হলে ১১ ধরনের চ্যালেঞ্জ সামনে রয়েছে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের নিরীক্ষা জরিপে নির্ধারণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো সার-সংক্ষেপেও এ বিষয়গুলো নজরে আনা হয়েছে। দেশের ৬৫ হাজার ৬২০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটিতে একটি করে নতুন শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করতে হবে। শ্রেণিকক্ষ চার বছর বয়সী শিশুদের উপযোগী হতে হবে। অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। কোমলমতি এসব শিশুকে দেখভাল করার জন্য একজন করে যত্নকারী নিয়োগ করতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর বর্তমান বাস্তব চিত্র তুলে ধরে এতে বলা হয়, বর্তমানে ৬৫ হাজার ৬২০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৪ হাজার ৭৯৯ বিদ্যালয়ে শুধু প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির জন্য নির্ধারিত শ্রেণিকক্ষ আছে এবং ৩৭ হাজার ৬৭২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন করে সহকারী শিক্ষক (প্রাক-প্রাথমিক) কর্মরত আছেন। এ ছাড়া আরো ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য একজন করে সহকারী শিক্ষকের (প্রাক-প্রাথমিক) পদ সৃজন করা হয়েছে এবং শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। পাশাপাশি প্রতিটি বিদ্যালয়ে চাহিদা অনুযায়ী অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের কাজ চলমান।
আমাদের বাণী ডট কম/০৬ মার্চ ২০২০/টিপি