ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা;  অতিরিক্ত সুদ হার বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ৯ শতাংশে নামাতে উদ্যোগ নেয় সরকার। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি অর্থমন্ত্রীও তাগাদা দেন বারবার। প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসেন ব্যাংক উদ্যোক্তারা। করোনা মহামারী শুরু হলে সুদ হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশনা ও যৌক্তিকতা আরও জোরদার হয়। কিন্তু ১৩ বাণিজ্যিক ব্যাংক কোনো নির্দেশনাই মানেনি। এর মধ্যে ১১ শতাংশও ছাড়িয়ে গেছে ৪ বেসরকারি ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনেই এ তথ্য উঠে এসেছে।

  • ৯ শতাংশের ওপরেও সুদ হার কার্যকর আছে এ রকম ব্যাংকের সংখ্যা ১৩টি। এর মধ্যে সাড়ে নয় শতাংশের নিচে আছে পাঁচটি। সাড়ে ৯ শতাংশ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত পাঁচ ব্যাংকের হার। আর ১১ শতাংশের ওপরে সুদ হার চার ব্যাংকের। সাড়ে ৯ শতাংশের ওপরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো হলোÑরাষ্ট্রায়ত্ত খাতের বিশেষায়িত প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি, ব্র্যাক ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও মধুমতি ব্যাংক। এর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও মধুমতি ব্যাংক ১১ শতাংশের বেশি সুদ নিয়ে থাকে।

প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ হারে গ্রহণ করে বিতরণ করছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ হারে; সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ৬ দশমিক ১৬ শতাংশ হারে গ্রহণ করে ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশে বিতরণ করছে; স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশে আমানত সংগ্রহ করে বিতরণ করছে ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে; এক্সিম ব্যাংক ৬ দশমিক ৬১ শতাংশে গ্রহণ করে বিতরণ করছে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে; ফার্স্ট সিকিউরিটি ৭ দশমিক ৯৭ শতাংশে গ্রহণ করে বিতরণ করছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে; ব্র্যাক ব্যাংক ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ হারে গ্রহণ করে বিতরণ করছে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে; পদ্মা ব্যাংক ৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ হারে গ্রহণ করে বিতরণ করছে ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশে; ইউনিয়ন ব্যাংক ৮ দশমিক ৯ শতাংশে গ্রহণ করে বিতরণ করছে ১২ দশমিক ৮২ শতাংশে; মধুমতি ব্যাংক ৬ দশমিক ২৪ শতাংশে গ্রহণ করে ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশে বিতরণ করছে।

  • ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ঋণের সুদ হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশনা আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। বেসরকারি বিনিয়োগকে গতিশীল করতে ও খেলাপি ঋণ কমাতে বর্তমান সরকার দায়িত্বে এসেই অতিরিক্ত সুদ হারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বার বার ব্যাংক উদ্যোক্তাদের নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি অর্থমন্ত্রীও অনুরোধ করেন। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার কাছেও প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসা হয়। এজন্য সরকারের কাছে থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়াও আদায় করা হয়।

করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পর ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে গেলে সুদ হার নামিয়ে আনার জন্য আরও চাপ তৈরি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলি ব্যাংকের তারিকায় ৫৯টি ব্যাংক রয়েছে। এর মধ্যে ১৩ বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে বৃদ্ধাঙ্গলি প্রদর্শন করে চলেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক, বিশেষায়িত, বেশি ও বিদেশি ব্যাংক রয়েছে। প্রচলিত ধারার পাশাপাশি ইসলামী ব্যাংকও রয়েছে।

  • এ নির্দেশনা না মানা অন্যায় বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, সুদ হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার জন্য কম সুদের সরকারের আমানতের অর্ধেক বেসরকারি ব্যাংকগুলোর জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে। বিধিবদ্ধ জমার হার কমিয়ে আনা হয়েছে। বিভিন্ন সিকিউরটিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। তারপরও যেসব ব্যাংক সুদ হার কমাচ্ছে না, পরিদর্শনে প্রমাণিত হলে ওই সব ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

করোনাকালীন সুদ হার কমিয়েও বাণিজ্যিক ব্যাংক গ্রাহক পাচ্ছে না। এরপরও এসব ব্যাংক ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদ হার হাঁকিয়ে রাখার অর্থ পাচ্ছেন না অর্থনীতিবিদরা। উদ্যোক্তারা মনে করছেন, এখনো সুদ হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছেন না। করোনার কারণে উদ্যোক্তারা নতুন করে উদ্যোগের কথা ভাবছেন না। পুরাতন ব্যবসা-বাণিজ্যকে কোনোমতে চালিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় ঋণের চাহিদা নেই। করোনা পরবর্তীতে ঋণের চাহিদা হলে এসব ব্যাংক সুদ হার কোন পর্যায়ে নিয়ে যাবে সহজেই বোঝা যাচ্ছে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ ব্যাপারে এখনই আরও অ্যাকটিভ হতে হবে।

আমাদের বাণী ডট কম/১০  জুলাই  ২০২০/পিপিএম 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।