নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা;  করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সমন্বয়হীনতা, অদূরদর্শিতা, অদক্ষতা, অযোগ্যতা, সিদ্ধান্তহীনতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা, চরম ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি ও জনগণের প্রতি জবাবদিহিতার প্রকট অভাব এ সঙ্কট গভীরতর করছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের রুহের মাফেরাত কামনা করে তিনি বলেন, করোনার কারণে মৃত্যুর মিছিল একদিকে জনমনে বিভীষিকাময় আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে, অপরদিকে সরকারি অব্যবস্থাপনার কারণে তৈরি হয়েছে একটা দুর্ভিক্ষ অবস্থা। তার সাথে তথ্যের অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা শিকার হচ্ছে নজিরবিহীন দমনপীড়নের। সারা দেশের মানুষ অস্থির এক যন্ত্রণায় ছটফট করছে।

আজ মঙ্গলবার  (৫ মে ২০২০) বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৩ মে নতুন করে ২৪ ঘন্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছে ৬৬৫ জন। উদ্বেগের কারণ হলো এর আগে এক দিনে এত মানুষ আক্রান্ত হওয়ার খবর মানুষ পায়নি। এর আগে সর্বোচ্চ শনাক্ত ছিল ৬৪১ জন। ৩ মে পর্যন্ত মোট মৃত্যু ১৭৭ জন। অন্যদিকে সুস্থ হওয়াদের সংখ্যা এক লাফে ১৭৭ থেকে বেড়ে ১০৬৩ জন দাবি করা হয়েছে। কীভাবে এত অল্প সময়ের মধ্যে এত বেশি রোগী সুস্থ হলো তার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে, ক্লিনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটির দেয়া নতুন গাইডলাইন অনুসরণ করা হয়েছে।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতিতে রোগ পরীক্ষার মূল সমন্বয়ের দায়িত্ব থেকে আইইডিসিআরকে সরিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষকে দায়িত্ব দেয়ায় সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, হঠাৎ পরীক্ষার দায়িত্বে বড় পরিবর্তনকে ঝুঁকিপূর্ণ, পরিকল্পনার অভাব এবং সমন্বয়হীনতার জের বলে আখ্যায়িত করছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে নতুন পরীক্ষায় দীর্ঘসূত্রতায় সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় অস্বচ্ছতা ও এর মান নিয়ে প্রশ্ন তোলায় খোদ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরাই প্রশাসনিক হেনস্থার শিকার হচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন,করোনা টেস্ট কিটসহ সরবরাহকৃত মালামালের গুণগত মান নিয়ে অভিযোগ করায় কমপক্ষে ২টি হাসপাতালের পরিচালক দু’জন চিকিৎসককে ওএসডি বা বদলি করা হয়েছে। যদিও পরে সরকারি অনুসন্ধানেই সরবরাহকৃত মাস্ক, পিপিই ত্রুটিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত হয়েছে এবং সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ক্ষমা চেয়েছে। তাহলে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো কেন? অথচ এসকল ত্রুটিপূর্ণ মাস্ক, পিপিই পরিধান করেই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সম্মুখ সমরে যুদ্ধে নামিয়ে দেয়া হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ইতোমধ্যে করোনা চিকিৎসার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত ৪১৯ জন ডাক্তার, ২৪৩ জন নার্স, ৩২৪ জন অন্যান্য স্বাস্থ্য সেবাকর্মীসহ সর্বমোট ৯৮৬ জন কোভিড-১৯-এর নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছেন এবং দুইজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করেছেন। অপরদিকে পুলিশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ন্যূনতম সুরক্ষা সামগ্রী নিয়েই সামনের সারিতে দেশের চিকিৎসক ও পুলিশ বাহিনী। কিন্তু করোনার ভয়াল থাবা তাদেরকে গ্রাস করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, করোনা সঙ্কট প্রকট হলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি এমনকি ভারতসহ বিশ্বব্যাপী যখন কঠোর লকডাউন ঘোষণা করা হয় তখন বাংলাদেশ সরকার কোনো লকডাউন ঘোষণা এবং গণপরিবহন বন্ধ না করে ২৬ মার্চ থেকে পাবলিক হলিডে ঘোষণা করে যা পরে কয়েক ধাপে বাড়িয়ে ১৬ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে বিপর্যয় যা ঘটার ঘটে গেছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ কাজে আসেনি। মানুষ দলে দলে গ্রামমুখী হয়েছে। সঙ্গে বেড়েছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। পরে তুঘলকি কান্ড ঘটানো হলো গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাজে যোগদানের নির্দেশনা দিয়ে। যতই বিজেএমইএ এবং সরকারের সমন্বয়হীনতার কথা বলা হোক না কেন, এ জন্য সরকার দায় এড়াতে পারে না।

গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য ৫০০০ কোটি টাকার ঋণ প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও অধিকাংশ শ্রমিকই এখনো তাদের বেতন পায়নি অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, শ্রমিকদের বেতন না পাওয়া এবং চাকরিচ্যুতির হুমকিতে অনেকেই দিশেহারা হয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে। অঘোষিত আংশিক লকডাউনের কারণে এই দেশের কোটি কোটি দিন আনে দিন খায় এ শ্রেণির দরিদ্র মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। আমাদের খেয়াল রাখা আবশ্যক যে, পশ্চিমা উন্নত দেশের মতো লকডাউন বা ছুটির ঘোষণা দিয়েই শ্রমিকদের বাড়িতে অবস্থান নিশ্চিত করা আমাদের মতো আর্থ-সামাজিক কাঠামোতে সম্ভব নয়। খাবারের নিশ্চয়তা না থাকলে ক্ষুধার্ত মানুষকে ঘরে ধরে রাখতে পারার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, সুষ্ঠুভাবে করোনা সঙ্কট মোকাবেলার জন্য সম্পদশালী রাষ্ট্র হওয়াটা জরুরি নয়। বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার দেখা যায় যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের তুলনায় ভিয়েতনাম, দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশ নেপাল, ভুটান এমনকি ভারতের কেরালা রাজ্যে তাদের আন্তরিকতা, দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং দরিদ্র মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সরাসরি আর্থিক-মঞ্জুরি তুলে দেয়ার মাধ্যমে এ সাফল্য অর্জন করেছে।

আমাদের বাণী ডট কম/০৫ মে ২০২০/ভিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।