অংকন তালুকদার, গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা;  দেশের করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে গত ২৬ মার্চ ২০২০ খ্রি. থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষনা করা হয়েছে। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা এখন লকডাউনের আওতায়।

প্রায় সকল পেশার মানুষ সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করছেন। এই প্রতিকূল অবস্থাতেও থেমে নেই কোটালীপাড়া উপজেলার কৃষি অফিস। চারিদিকে যখন থমথমে অবস্থা, তখন কৃষকের বোরো ধান কাটা ও কৃষির চাকা সচল রাখতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কর্মরত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটছেন কৃষকের বাড়ী বাড়ী। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কৃষকদের পাশে থেকে নিরলসভাবে কৃষি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তারা।

এই করোনাভাইরাসের সময়ে সাধারণ ছুটি ও পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের মাঝেও সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক স্বাভাবিক রয়েছে কৃষি সেক্টরের সকল কার্যক্রম। কৃষকের নিকট মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা দিনরাত ছুটছেন জরুরি সেবা নিয়ে। করোনা পরবর্তী সময়ে খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে আউশের প্রণোদনা কার্যক্রমের বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ চলছে ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বিভাগীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ত্রাণ বিতরণ ও ভিজিএফ, ভিজিডি, টিআর, খোলা বাজারে ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রিসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে ট্যাগ অফিসার ও করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে বিভিন্ন কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এ ছাড়াও কৃষকদের নিয়মিত সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার পরামর্শ প্রদান করছেন কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তাগণ।

উপজেলার এক চাষী বলেন ,করোনা ভাইরাসের ঝুঁকিকে উপেক্ষা করে আমাদের এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের বোরো ধানসহ যে কোন ফসলের ব্যাপারে তাদের কাছে কোন পরামর্শ চাইলে কাল বিলম্ব না করেই জমিতে এসে পরামর্শ প্রদান করেন। ওনারা কাদায় নামতেও পিছপা হয়না। আবার হাট, বাজারের সারের দোকান, বীজের দোকান ও কীটনাশকের দোকানেও মনিটরিং করতে দেখেছি। আমি ওনাদের সেবা পেয়ে কোন দিন ঠকেনি। আমি ওনাদের সেবায় খুশি।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এফ এম শহিদুল ইসলাম বলেন, করোনা ভাইরাসের কারনে আমাদের কাজের চাপ অনেকগুন বেড়েছে, বেড়েছে আমাদের দ্বায়ীত্ববোধও।। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা করোনা পরিস্থিতিতে শুধুই জামা- কাপড় পরে সার্বক্ষণিক চাষীর উন্নয়নে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের নেই কোন পিপিইর ব্যবস্থা।নেই স্বাস্থ্য ঝুঁকির কোন ব্যবস্থা। এহেন অবস্থায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন আমরা যারা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ করোনা, রোদ, বৃষ্টি ঝড়ের মধ্যে চাষীর সেবায় নিয়োজিত রয়েছি আমরা যেন অন্য দপ্তরগুলোর মত সকল সুবিধাদি পেয়ে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি।

উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কৃত্তিবাস পান্ডে বলেন, করোনা ঝুঁকিকে উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং আমাদের উর্ধতন কর্মকর্তাদের দিক নির্দেশনায় আমরা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা/সমমান কৃষি কর্মকর্তাগন সার্বক্ষণিক কৃষকের পাশে থেকে মাঠে ময়দানে কৃষকদের উন্নয়নে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ত্রাণ বিতরণ ও ভিজিএফ, ভিজিডি, টিআর, খোলা বাজারে ১০ টাকা কেজির চাল বিক্রিসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছি।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নিটুল রায় বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ কৃষকের পাশে থেকে চলমান বোরো ধান কাটায় সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপহার আউশ প্রণোদনা পৌঁছে দিচ্ছেন কৃষকের দোরগোড়ায়। করোনা মহামারীকালীন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ।এমনকি সাধারণ ছুটি থাকলেও সপ্তাহের অন্যান্য দিনের মতো শুক্রবার ও শনিবারেও পূর্ণভাবে চলমান রেখেছে কৃষি সেবা কার্যক্রম। প্রাণঘাতী করোনা তাদের দমাতে পারেনি বরং তাদের কর্মব্যস্ততা বাড়িয়েছে।

আমাদের বাণী ডট/০৮ মে ২০২০/পিবিএ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।