ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা;  করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দেশের মানুষকে সেবা দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা প্রবাসী ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে কোন ক্ষমতাবলে ও কোন আইনে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে তা জানতে চেয়ে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আইনি (লিগ্যাল) নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

  • আজ শুক্রবার (১২ জুন ২০২০) সকালে জনস্বার্থে সংশ্লিষ্টদের ই-মেইলে মানবাধিকারকর্মী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ এম জামিউল হক ফয়সালের পক্ষে অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার গাজী ফরহাদ রেজা এই নোটিশ পাঠান।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (জননিরাপত্তা বিভাগ) সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয়ের (সুরক্ষা সেবা বিভাগ) সচিব ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এ নোটিশ দেয়া হয়েছে। আগামী ২ দিনের মধ্যে নোটিশের উপযুক্ত ব্যাখ্যা বা জবাব না পেলে যথাযথ আইনের আশ্রয় নেয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।

  • নোটিশে বলা হয়েছে, ঢাকায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে কেন পাঠানো হয়েছে, কীসের ভিত্তিতে একজন করোনাযোদ্ধাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে, যেখানে একই সময়ে বিদেশ থেকে আশা যাত্রীদের এবং পরবর্তীতে চীন থেকে আশা ডাক্তারদের দেশের অভ্যন্তরীণ প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়?

নোটিশের বিষয়ে আইনজীবী অ্যাডভোকেট জামিল হক ফয়সাল বলেন, ডা. ফেরদৌস গত ৭ জুন বাংলাদেশের করোনা আক্রান্ত মানুষের সেবা দিতে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সঙ্গে নিয়ে আসেন করোনাভাইরাসে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী। ট্যাক্সের জন্য সেগুলো আটকে রাখা হয়েছে। আইশৃঙ্খলা বাহিনী বাহিনী তাকে বাসায় যেতে না দিয়ে ঢাকার ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টারে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছে। অথচ ওই দিন চীন থেকে আগত মেডিকেল টিমকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়নি। তাই এর কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে।

  • নোটিশে বলা হয়, ম্যানহাটনের প্রাচীনতম মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের আশা ও ভরসার প্রতীক এবং করোনাভাইরাসের ভয়ে যেখানে বিশ্বের অনেক বাঘা বাঘা ডাক্তার তাদের চেম্বার বন্ধ করে অন্দরে ঢুকে গেছেন, সেখানে নিউ ইয়র্কের মৃত্যুপুরীতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়েছেন ডা . ফেরদৌস।

তিনি দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে। তবে পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানা যায়, তাকে বিমানবন্দর থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। দেশের এই ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ সরকার ডা. ফেরদৌসের মতো মানুষদের খুঁজছে এবং তিনি শুধুমাত্র প্লাজমা হিরো হিসেবে নয়, একজন প্রথিতযশা ডাক্তার হিসেবে দেশের অনেক মানুষের উপকারে আসতে পারেন তিনি।

  • গত ৭ জুন আমেরিকা প্রবাসী আলোচিত চিকিৎসক ডা. ফেরদৌস খন্দকার ঢাকায় আসেন। ৮ জুন ফেসবুক লাইভে এসে তিনি জানান, বাংলাদেশে আসার পর তাকে ঢাকার ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টারে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘নিউইয়র্কে অবস্থানকালেই আমার রক্ত পরীক্ষায় এন্টিবডি পজিটিভ এসেছে, তাই কোয়ারেন্টাইনে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। তারপরও আমাকে জোর করে কোয়ারেন্টাইনের নামে আটকে রাখা হয়েছে।’

  • যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রে করোনার চিকিৎসা দিয়ে সফলতা দেখিয়েছেন তিনি। সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দিয়েছেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর জন্যই বাংলাদেশে এসেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

গত ৭ জুন বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে কাতার এয়ারওয়েজের দ্বিতীয় বিশেষ বিমান দেশটির নিউ ইয়র্ক থেকে ১১২ বাংলাদেশিকে নিয়ে দেশে ফেরে। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, উচ্চ ডিগ্রি অর্জনে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী-দর্শনার্থী, পেশাজীবী ও ব্যবসায়ী ছিলেন। এর আগে গত ১৫ মে যুক্তরাষ্ট্রে আটকে পড়া ২৪২ জন বাংলাদেশিকে নিয়ে কাতার এয়ারওয়েজের প্রথম বিশেষ বিমান ওয়াশিংটন থেকে দেশে ফেরে। এছাড়া ৮ জুন চীনের বিশেষজ্ঞ দল ঢাকায় এসেছেন। তাদের সবাইকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবার বিষয়ে সমান বিবেচনা প্রসূত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি, যেটি বাংলাদেশের সংবিধানে প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

এদিকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত হেলথ বুলেটিনের সর্বশেষ (১১  জুন ২০২০) তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৬ হাজার ১১৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ১৫ হাজার ৭৭২টি নমুনা। এ নিয়ে দেশে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো চার লাখ ৫৭ হাজার ৩৩২টি। নতুন নমুনা পরীক্ষায় করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে আরও তিন হাজার ১৮৭ জনের মধ্যে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৭৮ হাজার ৫২ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন আরও ৩৭ জন। আগের দিনও সমানসংখ্যক রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো এক হাজার ৪৯ জনের। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৮৪৮ জন। ফলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন মোট ১৬ হাজার ৭৪৮ জন।

আমাদের বাণী ডট কম/১২ জুন ২০২০/ডিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।