খুলনায় স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সব ছাত্রাবাস (হল) ছাত্রলীগের দখলে রয়েছে। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা হলে হলে একক আধিপত্য বিস্তার করেছে। ভিন্নমতাবলম্বী ছাত্র সংগঠনের শিক্ষার্থীদের মারধর করে তারা হল থেকে বের করে দিয়েছে। তাদের ভয়ে অনেকে হলে আসেন না। বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাস ও হলে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও মারধর করে। এছাড়া ছাত্রলীগের একশ্রেণির নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ক্যাম্পাস ও হলে হলে মাদক সেবনের ঘটনা ঘটে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় অন্য ছাত্র সংগঠনের ব্যানার ও পোস্টার লাগাতে দেয়া হয় না। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে ২৭ শিক্ষার্থীকে মারধরের শিকার হয়েছেন। শিবির সন্দেহে অনেককে মারধর করা হয়। ২০১২ সালে খুলনা মেডিকেল কলেজের (খুমেক) একটি হলে ক্রিকেটের স্টাম্প দিয়ে এক ছাত্রকে বেধড়ক পেটায় ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। বিভিন্ন সময় সরকারি বিএল কলেজে ছাত্রলীগের হামলায় ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। কুয়েটের ছয়টি হল, খুমেকের তিনটি হল এবং বিএল কলেজের পাঁচটি হল ছাত্রলীগের দখলে রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) খানজাহান আলী হল, এমএ রশিদ হল, ফজলুল হক হল, বঙ্গবন্ধু হল, অমর একুশে হল এবং লালন শাহ হলে ছাত্রলীগের আধিপত্য রয়েছে। হলগুলোয় ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন ও কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা থাকতে পারেন না। দু’বছর আগে শিবির সন্দেহে পাঁচ ছাত্রকে বেধড়ক মারধর করে পুলিশে সোর্পদ করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছাত্রদলের এক নেতা জানান, ২০১৪ সালের পর থেকে তারা ক্যাম্পাসছাড়া। তাদের কোনো মিছিল বা মিটিং করতে দেয়া হয় না। কুয়েট ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন হাসান জানান, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য সংগঠনের দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই। ছাত্রলীগের কোনো হল কমিটি নেই। সাতটি হলের নেতৃত্বে সিনিয়র ছাত্ররা রয়েছেন। খুব দ্রুত কুয়েট ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে।

খুলনা মেডিকেল কলেজের (খুমেক) বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন হল, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় হল ও শহীদ মুর্তজা হল ছাত্রলীগের দখলে রয়েছে। তবে হলগুলোয় ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। এ বিষয়ে খুমেক ছাত্রলীগের সভাপতি ডা. আসানুর ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসে অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম নেই। ছাত্রলীগ ও ইচিপের (ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ) নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। হলগুলোয় আমাদের আদর্শের শিক্ষার্থীরা থাকছেন।

সরকারি বিএল কলেজের সুবোধ চন্দ্র হল, কবি নজরুল হল, ড. জোহা হল, মহসিন হল ও শহীদ তিতুমীর হলের মধ্যে মহসিন হল ছাড়া অন্য সব হলে গত বছরও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ছিলেন। কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হেদায়েতুল্যাহ দিপু বলেন, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর রাতে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মারধর করে হলগুলো থেকে বের করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য ছাত্র সংগঠন স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে না। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে সন্ধ্যার পর মাদকের আড্ডা বসে। কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নিশাত ফেরদৌস অনি বলেন, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনের পর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন। এখনও তারা হলে ফেরেননি। তবে ছাত্র ইউনিয়ন, কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠনের শিক্ষার্থীদের হলে সিট রয়েছে। তিনি বলেন, স্থানীয়রা জোর করে হলে প্রবেশ করে মাদক সেবন করে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।