সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-বৈষম্য কমানোসহ গ্রেড উন্নীতকরণের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তা নাকচ করে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

বেতন বৃদ্ধি করে বৈষম্য কমানোর জন্য ১০টি যুক্তি তুলে ধরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। যুক্তিতে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের কথা তুলে ধরা হয়। বলা হয়, নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী বেতন-বৈষম্য দূর করার বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনার দাবি রাখে।

তবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর সুযোগ নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকের শিক্ষকদের বিদ্যমান বেতন যথাযথ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সাদিয়া শারমিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদে বেতন গ্রেড যথাযথ ও সঠিক থাকায় প্রধান শিক্ষক পদের বেতন গ্রেড-১০ ও সহকারী শিক্ষক পদের বেতন গ্রেড-১১তে উন্নীতকরণের সুযোগ নেই।’

গ্রেড উন্নীতকরণের প্রস্তাব নাকচ করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন পৌনে ৪ লাখ সহকারী শিক্ষক। শিক্ষক নেতারা বলেন, গ্রেড বৈষম্য কমানোর দাবি দীর্ঘদিনের। সরকার বারবার এ দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষকদের বেতনবৃদ্ধির বিষয়ে অঙ্গীকার করেন। শিক্ষক নেতারা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী-শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে কোথাও কোন যথাযথ নির্ভরযোগ্য আশ্বাস না পেয়ে ধারাবাহিক আন্দোলনে নেমেছেন দেশের পৌনে ৪ লাখ সহকারী শিক্ষক এবং প্রধানশিক্ষকদের যৌথ প্যানেল। এদিকে এক কাতারে এসেছে প্রাথমিকের সব শিক্ষক সংগঠনগুলো।

এদিকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার নিকটবর্তী হওয়ায় আর শিক্ষকদের ধারাবাহিক আন্দোলনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অচলাবস্থায় চিন্তায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। শুরুতে আন্দোলনরত শিক্ষকদের দমাতে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কঠোর অবস্থান নিতে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রণালয়। তবে এই প্রজ্ঞাপনে শিক্ষকরা কর্ণপাত না করে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় আন্দোলন দমাতে শুরু হয়েছে আশ্বস্তকরণনীতি। গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা পরিষদ হলরুমে মিড ডে মিল বাস্তবায়নের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায়  প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেছেন, প্রাথমিকের শিক্ষকদের আর আন্দোলন করতে হবে না। আপনাদের জন্য যা যা প্রয়োজন তা করা হয়েছে। আপনারা মানসম্মত শিক্ষা দেবেন। আপনারা ছেলেমেয়েদের কিন্ডারগার্টেন থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসুন।

 প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এর এহেন আশ্বস্তকরণের বক্তব্যে শিক্ষকনেতারা আশস্ত হলেও আশস্ত হচ্ছেন না প্রাথমিকের মাঠ পর্যায়ের হাজারো শিক্ষকরা। তারা বলছেন দাবি না মেনে আন্দোলন দমাতে এরকম বহু আশার বাণী আমরা শুনতে পেলেও বাস্তবে কিছুই হয় না আন্দোলন শেষ। একবার আন্দোলন শেষ করতে পারলে শিক্ষকদের ফের আন্দোলনে নামা মুশকিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের মাঠ ছাড়া হবে সবচেয়ে বোকামী।সামনে পিইসি পরীক্ষা শিক্ষকদের এই আন্দোলনে চিন্তায় মন্ত্রণালয় এই সুযোগ কাজে লাগাতে না পারলে এই আন্দোলন সফল হবার আর কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয় যে প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে তার দেখভালের দায়িত্ব গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করতে না পারার ব্যর্থতা গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। কিভাবে তারা সমন্বয় করবেন তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ই জানেন।

অধিকাংশই শিক্ষকই গ্রেড বৈষম্য সমাধানের ঘোষণা ছাড়া মাঠ ছাড়তে নারাজ। এখন তারা তাকিয়ে আছে শিক্ষকনেতাদের নির্দেশনার উপর। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের গ্রেড পরিবর্তনের দাবিতে চার দিন কর্মবিরতি পালনের পর আগামী ২৩ অক্টোবর রাজধানী ঢাকায় মহাসমাবেশে করবে প্রাথমিক শিক্ষকরা। দাবি আদায় না হলে এ সমাবেশ থেকে বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।