মুক্তিযোদ্ধার নাতনি নয়, অথচ মুক্তিযোদ্ধা মো. ফয়জুল কবিরের নাতনি সেজে ভুয়া প্রত্যায়নপত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর বাঁশখালীর মধ্য কাথারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন ফারজানা বিনতে সাদেক। এরপর নিয়মিত স্কুলে যেতেন, বেতন-ভাতা ওঠাতেন। যেই মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যায়নপত্রে তিনি চাকরি পেয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধাই চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসে অভিযোগ করে বসেন `সহকারী শিক্ষিকা ফারজানা বিনতে সাদেক আমার নাতনি নয়`। ওই শিক্ষিকা জালিয়াতি করে আমার নাতনি সেজে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়েছেন। আমি ওই শিক্ষিকার উপযুক্ত শাস্তি চাই।

জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিধি মোতাবেক মুক্তিযোদ্ধার নাতনি প্রত্যায়নপত্রের সনদ দিয়েছিলেন খানখানাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু ছিদ্দিক আবু। এ ছাড়া স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিও একইরকম প্রত্যায়নপত্র দেন।

বাঁশখালী উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, খানখানাবাদ ইউনিয়নে কদমরসুল গ্রামের মৃত মো. ইছহাক মিয়ার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা মো. ফয়জুল কবির। তাঁর নাতনি সেজে মুক্তিযোদ্ধা কোটার বিধি মোতাবেক বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রত্যায়নপত্র নেন বাহারছড়া ইউনিয়নের রত্নপুর গ্রামের আবু সাদেকের কন্যা ফারজানা বিনতে সাদেক। ওই প্রত্যায়নপত্র নিয়ে শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পদে আবেদন করেন। ওই পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় নির্বাচিত হয়ে ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর বাঁশখালীর মধ্য কাথারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পান।

মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুল কবিরের অভিযোগের প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। সেই প্রেক্ষিতে গত ৮ মে তদন্ত হয়। তাতে ফারজানা বিনতে সাদেক মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুল কবিরের নাতনি নয় প্রমাণিত হয়েছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা সহকারী শিক্ষিকা ফারজানা বিনতে সাদেকের নিয়োগাদেশ বাতিল করেন। পাশাপাশি ওই শিক্ষিকার নিয়োগের পর থেকে উত্তোলিত যাবতীয় বেতন-ভাতাদি আদায় করে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা করার আদেশ দেওয়া হয়।

বরখাস্তকৃত শিক্ষিকা ফারজানা বিনতে সাদেকের বাবা আবু সাদেক ও মা ফিরোজা সাদেক বলেন, আমাদের বাড়ি বাহারছড়া ইউনিয়নে। মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুল কবিরের বাড়ি খানখানাবাদ ইউনিয়নে। তাঁর সাথে আমার মেয়ের নানা-নাতনি সম্পর্ক। এটা সবাই জানেন। প্রকৃত নানা-নাতনি না হলেও মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুল কবির নিজেই চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিদের কাছ থেকে প্রত্যায়নপত্র নিয়ে দিয়েছেন। আমরা বাহারছড়ার মানুষ কিভাবে খানখানাবাদের প্রত্যায়নপত্র নিতে পারব? এমনকি আমার মেয়ের মৌখিক পরীক্ষার সময় মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুল কবির জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের বাইরে বসেও ছিলেন। নিয়োগের পর আমাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুল কবিরের বিরোধ হওয়ায় তিনি অভিযোগ করে আমাদের মেয়ের চাকরি খেয়েছেন। প্রকৃত দোষী আমার মেয়ে নয়, মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুল কবির। কেন তিনি স্বতঃপ্রণোদিত প্রত্যায়ন ত্র দিলেন আবার অভিযোগও করলেন- বিষয়টি জোরালো তদন্ত হওয়া উচিত।

মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুল কবির বলেন, আমি স্বতঃপ্রণোদিত প্রত্যায়নপত্র দিলে কি কখনও অভিযোগ করতাম? সব প্রত্যায়নপত্র জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়েছেন। আমার সাথে এদের কোনো সর্ম্পক নেই।

খানখানাবাদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু ছিদ্দিক আবু বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুল কবিরকে আমি প্রত্যায়নপত্র দিয়েছিলাম ফারজানা বিনতে সাদেক নাতনি হিসেবে। উনি নিজেই ওই প্রত্যায়নপত্র নিয়েছিলেন। ওই প্রত্যায়নপত্র দেওয়ার সময় যাবতীয় বিষয়ও সঠিকভাবে তদন্ত হয়েছিল।

বাঁশখালী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যায়নপত্র জালিয়াতির অভিযোগে সহকারী শিক্ষিকা ফারজানা বিনতে সাদেককে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি আর বিদ্যালয়ে যান না। ওই শিক্ষিকার নিয়োগের পর থেকে উত্তোলিত যাবতীয় বেতন সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য তাকে নির্দেশ দিয়েছি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।