নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার ৭টি হাসপাতালকে ৪লক্ষ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।মঙ্গলবার এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট মো: রোকনুজ্জামান খান।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় সহযোগিতা করেন,নোয়াখালী সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার ডা. আরাফাত, বিএমএ প্রতিনিধি ডা. দ্বীপন চন্দ্র মজুমদার, ড্রাগ সুপার মাসুদুজ্জামান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক দেবানন্দ সিনহা এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করেন চাটখিল থানা পুলিশ।

গোপন সংবাদ ও অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক এর নির্দেশে জনস্বার্থে সারাদিনব্যাপী ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার সময় অভিযান পরিচালনা কারী টিমের সদস্যগন দেখতে পান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলোতে মেডিকেল প্রাকটিস ‌‌এবং প্রাইভেট ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরীজ (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৮২ বিধি অনুযায়ী তফসিল ক, খ ও গ তে বর্ণিত অবকাঠামো, ৩৬ ধরণের উপকরণ, ডিউটি ডাক্তার, নার্স, জীবন রক্ষাকারী ড্রাগ, ইমার্জেন্সী সেবা, অপারেশন থিয়েটার, অক্সিজেন সিলিন্ডার, এমনকি হাসপাতাল ক্লিনিক পরিচালনার লাইসেন্সও পাওয়া যায়নি।

এসবের প্রায়গুলো ছিল অপরিস্কার অপরিচ্ছন্ন। অপারেশন থিয়েটারগুলোর মূল বেডগুলো পাওয়া যায় জং ধরা ও অর্ধ রং বিহীন, অপারেশন থিয়েটারে যেসব ঔষধ থাকার কথা সেই ধরণের ঔষধগুলো অযাচিতভাবে সংরক্ষণ করা, অপারেশনের জন্য ব্যবহৃত সিজার ও অপর যন্ত্রপাতিগুলোও ছিল জং ধরা, অপারেশনে ব্যবহৃত কাপড় ও বালিশে লেগে ছিল রক্তের দাগ ও তাজা রক্ত।

অভিযানের সময় এসব হাসপাতালের কোন ডিউটি ডাক্তার পাওয়া যায়নি। সর্বোপরি অধিক মূল্য গ্রহণ করে সেবার নিম্নমান প্রদান করা হচ্ছে। ড্রাগ আইন ১৯৪০ অনুযায়ী প্যাথলজি ও ফার্মেসীতে আদালত পরিচালনার সময় দেখা যায়,কোন লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতিরেকে ডিগ্রী বিহীন টেকনিশিয়ান দ্বারা ল্যাবগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে এবং একি সাথে এসব ল্যাবে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা ব্যবহৃত হচ্ছে না। ল্যাবগুলোতে প্রচুর পরিমাণে মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ পাওয়া গেছে, যা দিয়ে প্যাথলজীর টেস্ট কর্যক্রম করা হচ্ছিল এবং এগুলো জব্দ করা হয়েছে। এসময় উপজেলার কোন ফার্মেসীতেই ফার্মাসিস্ট পাওয়া যায়নি।

ফার্মেসীগুলোতেও বিপুল পরিমান মেয়াদ উত্তীর্ণ ঔষধ ও পাওয়া ‍গেছে। এক্স-রে পরীক্ষার অনুমোদনের জন্য হাসহপাতালগুলোতে পাওয়া যায়নি আনবিক শক্তি কমিশনের অনুমোদন।

ক্লিনিক্যাল বর্জ্র ব্যবস্থাপনার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও এসব প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যায়নি। কোন হাসপাতাল,ক্লিনিক,প্যাথলজিকে বর্জ্র ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৩৯ ধারা অনুযায়ী সেবার মূল্য তালিকা সংরক্ষণের বিষয়ে দেখা যায় প্রায় প্রতিষ্ঠানে যেসব সেবা দেওয়া হচ্ছে তার সকল সেবার নাম ও সেবার মূল্য দেওয়া নেই এবং এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠানে সেবার মূল্য তালিকাও দেখা যায়নি।

এসব অপরাধের জন্য চাটখিল ইসলামিয়া হাসপাতালকে ড্রাগ আইন ১৯৪০ অনুযায়ী ৭০হাজার, চাটখিল ফিজিও থেরাপি সেন্টারকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী ৩৫হাজার, নবজাতক শিশু চাইল্ড কেয়ার ও গাইনি হাসপাতালকে ড্রাগ আইন ১৯৪০ ও মেডিক্যাল প্যাকটিস এবং বেসরকারী ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরি (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৮২ অনুযায়ী ৭৫হাজার, জনজীবন মেডিক্যাল সার্ভিসেসকে ড্রাগ আইন ১৯৪০ অনুযায়ী ৭০হাজার, চাটখিল শিশু হাসপাতালকে ড্রাগ আইন ১৯৪০ অনুযায়ী ৮৫হাজার, চাটখিল স্কয়ার হাসপাতালকে ড্রাগ আইন ১৯৪০ ও মেডিক্যাল প্যাকটিস এবং বেসরকারী ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরি (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৮২ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী ৪৫হাজার ও ডা: জেবুন্নেছা জেনারেল হাসপাতালকে ড্রাগ আইন ১৯৪০ ও মেডিক্যাল প্যাকটিস এবং বেসরকারী ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরি (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ ১৯৮২ অনুযায়ী ৫০হাজার টাকা জরিমানা দন্ড আরোপ ও আদায় করা হয় এবং ৭টি হাসপাতালকে মোট জরিমানা ৪লক্ষ ৩০হাজার টাকা।

নোয়াখালী জেলা প্রসাশন জানিয়েছেন,জনস্বার্থে অভিযান অব্যাহত থাকবে। কারও কাছে কোন তথ্য থাকলে তা জেলা প্রশাসন, নোয়াখালীকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।