ঠাকুরগাঁও জেলায় কষ্ট করে আলু উৎপাদনের পর বেশি দামে বিক্রয়ের স্বপ্ন নিয়ে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেছিলেন ঠাকুরগাঁও জেলার চাষিরা। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্নকে ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এস বি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ (হিমাগার) লিমিটেডের বিরুদ্ধে।
ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি পরিমাণ আলু সংরক্ষণ করে দীর্ঘদিন মেশিনে রাখায় অসময়ে গজিয়েছে আলুর টেক। হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করে সতেজ থাকার কথা থাকলেও দীর্ঘদিন মেশিনে বন্ধ থাকার কারণে অল্প সময়ে এসব আলুর টেক গজানোর ফলে অল্প দামে আলু বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। কারণ চাষিদের পাশাপাশি অনেক ব্যবসায়ীরাও হিমাগারে আলু কিনে সংরক্ষণ করে থাকেন। এ দিকে, চাষিদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে হিমাগার কর্তৃপক্ষ বলছেন, পরিমাণ বেশি হওয়াতে নয় বরং বৈদ্যুতিক সমস্যার কারণে এমনটা ঘটেছে।
জানা যায়,  ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মাদারগঞ্জে অবস্থিত এস বি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সাধারণ আলু ধারণ ক্ষমতা এক লাখ ৬০ হাজার বস্তা (৮৪ কেজি প্রতি বস্তা)। তবুও সংরক্ষণ করা হয় প্রায় এক লাখ ৮৫ হাজার বস্তা। সরকারি হিসেবে প্রতি বস্তা ৪শ টাকা নির্ধারণ করা হলেও এস বি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃপক্ষ ২৪০ টাকায় চাষি ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সংরক্ষণ করেন। ফলে ওই হিমাগারটি অল্প সময়ের মধ্যেই আলুতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ঠাকুরগাঁও হিমাগার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, জেলায় প্রায় ১৭টি হিমাগার রয়েছে। আরও কয়েকটি নতুন তৈরি হচ্ছে। তাই আলু সংরক্ষণের সময় অনেক প্রতিযোগিতা শুরু হয়। যে যত কত দাম নির্ধারণ করে তার হিমাগার তত দ্রুত ভর্তি হয়। শুনেছি এস বি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কিছু আলুর টেক ইতিমধ্যেই গজিয়ে গেছে। তবে, অন্য সব হিমাগারের আলু ভালো রয়েছে। এ দিকে, ক্ষতিগ্রস্ত চাষি ও ব্যবসায়ীদের দাবি হিমাগার কর্তৃপক্ষ আলু সংরক্ষণের পরে বিদ্যুৎ বিল বাঁচানোর জন্য মেশিন দীর্ঘদিন বন্ধ রাখে। ফলে অসময়ে এসব আলুর টেক গজাতে শুরু করেছে। এতে বাজার দর থেকে প্রতি কেজি আলু তিন থেকে চার টাকা কমে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
বিশেষ করে বীজ আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। এখনো মাঠে আলু রোপণের আরও প্রায় দুই মাস বাকি। চাষি ও ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন ছিল বীজ হিসেবে আলু রোপণ মৌসুমে অনেক ভাল দামে তারা এগুলো বিক্রি করবেন। কিন্তু হিমাগারে সংরক্ষণ থাকা অবস্থায় অসময়ে আলুর টেক গজার কারণ বীজের মান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় এসব আলু বর্তমানে খাওয়ার আলু হিসেবে কম দামে বিক্রি হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও
সদর উপজেলার রহিমানপুরের মোরলডোবা গ্রামের চাষি আবুল কাশেম বলেন, ‘মাদারগঞ্জের এস বি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে ৩শ বস্তা আলু রেখেছিলাম। ১৩ টাকা দরে প্রতি কেজি আলু বিক্রিও করেছি। কিন্তু ব্যবসায়ীকে আলু দেওয়ার সময় যখন আলুর টেক গজানো দেখছে তখন প্রতি কেজিতে তিন টাকা কম দাম দিয়েছে। এতে প্রায় ৭০ হাজার টাকা কম দাম পেয়েছি।’ একই ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের চাষি আল মামুন বলেন, ‘৪শ বস্তা আলু ওই হিমাগারে রেখেছিলাম। ১৪ টাকা দরে বিক্রি করার পরে দাম নিতে হয়েছে ১০ টাকা দরে। কারণ আলুর টেক অনেক বড় বড় হয়ে গিয়েছিল। এ দিকে, টেক গজার পর ওজনও অনেক কম হয়েছে। এতে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার টাকা কম পেয়েছি। বিষয়টি হিমাগার কর্তৃপক্ষকে বলেও কোনো লাভ হয়নি।’ এমন অনেক চাষি ও ব্যবসায়ী রয়েছেন যারা লাভ তো দূরের কথা ওই হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করে পুঁজিটুকুও হারিয়েছেন।
এ ব্যাপারে এস বি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কুরবানির সময় প্রায় ২০ দিন বিদ্যুৎ না থাকার কারণে জেনারেটর দিয়ে সব সময় মেশিন চালানো সম্ভব হয়নি। এতে কিছু মানুষের আলুর টেক গজায় গেছে। অনেকে বিক্রি করে ফেলেছেন। তিনি বলেন, কিছু চাষি ও ব্যবসায়ী তাদের আলুর টেক গজানোর বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। তবে, শুধু এস বিতে নয় জেলার অনেক হিমাগারেই এবার আলুর টেক গজিয়ে গেছে। এটা নতুন কোনো বিষয় নয়।
এদিকে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, বীজ আলু আগে গজানোর কারণে মান কিছুটা নষ্ট হয়। তবে, বীজ আলু খাওয়া ঠিক নয়। কারণ এগুলো বিষ দিয়ে প্রক্রিয়াধীন করা হয়। এ ক্ষেত্রে খাওয়ার আলু গজালে তেমন সমস্যা নেই। গজানো টেক ভেঙে খাওয়া যায়।
উল্লেখ্য, আলু হিমাগারে রাখার ফলে সতেজ থাকে। রোপণের ১৫ থেকে ২০ দিন পূর্বে হিমাগার থেকে আলু বের করার পরে এর টেক গজাতে শুরু করে। পরে জমিতে রোপণ করতে হয় ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।