ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা;  কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করেছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। একইসঙ্গে সিলেট, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকার কথাও জানানো হয়েছে।

গতকাল বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকতে পারে। ঢাকা জেলার আশেপাশের নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া কুশিয়ারা ব্যতীত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থিতিশীল থাকতে পারে।

অন্যদিকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বালু নদীর ডেমরা পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে এবং ধরলা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে পর্যবেক্ষণাধীণ ১০১টি পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৭টির, হ্রাস পেয়েছে ৪৩টির, অপরিবর্তিত রয়েছে একটির এবং বিপদসীমার ওপরে নদীর সংখ্যা ২০টি। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে গাইবান্ধা ২৫০ মিলিমিটার, বরগুনা ১৮৫ মিলিমিটার, সুনামগঞ্জ ১০০ মিলিমিটার, সাতক্ষীরা ৮৩ মিলিমিটার, দেওয়ানগঞ্জ ৮০, পটুয়াখালী ৭৮ মিলিমিটার, মহাদেবপুর ৭৩ মিলিমিটার, চাঁদপুর বাগান ৬৯ মিলিমিটার এবং চট্টগ্রাম ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিকে বন্যার অবনতি হলেও বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমেছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সময়ে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি হয়েছে নোয়াখালীতে ৭৬, কক্সবাজারে ৬৫ ও বরগুনায় ৫২ মিলিমিটার। একই সময়ে বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারতের দার্জিলিংয়ে ৬৪ ও চেরাপুঞ্জিতে ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

দেড় হাজার টন চাল, ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ : অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তায় ২৭ জেলার জন্য এক হাজার ৫৫০ মেট্রিক টন চাল, ৮৭ লাখ টাকা ও ১৪ হাজার অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। টাকার মধ্যে ১৩ লাখ ত্রাণ হিসেবে বিতরণ, গো-খাদ্যের জন্য ৫৪ লাখ এবং শিশু খাদ্যের জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের অনুকূলে এ বরাদ্দ দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ঢাকা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, সিলেট, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে এই সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, বরাদ্দ করা ত্রাণ (চাল ও নগদ টাকা) শুধু আপদকালীন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া অন্য কোনো কাজে এ বরাদ্দ বিতরণ করা যাবে না। মানবিক সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশনা অনুসরণ করে এ বরাদ্দ বিতরণ করতে হবে। নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় হিসাব সংরক্ষণ করতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান ও সমন্বয় কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, বন্যায় ৭ লাখ ৩১ হাজার ৯৫৮টি পরিবারের ৩০ লাখ ৪০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

আমাদের বাণী ডট কম/২৫ জুলাই ২০২০/পিপিএম

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।