ঠাকুরগাঁও জেলার সর্বত্র মরিচের আভায় লাল গালিচায় ঢেকে গেছে ।যতদূর চোখ যায় মাঠের পর মাঠ শুধু লাল গালিচার দৃশ্য। দেখতে লাল গালিচা মনে হলেও আসলে কিন্তু তা নয়। ক্ষেতের পাশে স্কুল কলেজের মাঠ কিংবা মিলের চাতালে মরিচ শুকানোর দৃশ্য। এভাবেই চলছে ঠাকুরগাঁওয়ে মরিচ সংগ্রহ ও শুকানোর হিড়িক। বাজারে দাম বেশ ভালো, তাই কৃষক-কৃষাণীরা পরিবারের সবাইকে নিয়ে ক্ষেত থেকে মরিচ সংগ্রহ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

চলতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় রবি মওসুমে ৩৫০ হেক্টর এবং খরিপ মৌসুমে ৯৪৫ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। আর খরিপ মওসুমে ৭৬৫ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ করা হয়।

মরিচের আভায় ঢেকে গেছে লাল গালিচা
ছবি; আমাদের বাণী

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এবার আবহাওয়া ভাল থাকায় ব্যাপক জমিতে মরিচের আবাদ করে চাষীরা। ইতোমধ্যে প্রতিটি জমিতে কাঁচা মরিচ পেকে লাল হয়ে গেছে। তাই চাষীরা সময় নষ্ট না করে ক্ষেত থেকে মরিচ সংগ্রহ করছেন। কেউ স্কুল কলেজের মাঠে, কেউ ঈদগা মাঠে কেউবা হাসকিং মিলের মাঠে মরিচ শুকাচ্ছেন। আর যাদের সে রকম সুবিধা নেই, তারা ক্ষেতের পাশে পলিথিন পেতে দিয়ে মরিচ শুকাচ্ছেন। আর এ দৃশ্য অনেকটা লাল গালিচার মতো। মরিচ এখানকার কৃষকদের নিকট অর্থকরী ফসল হওয়ায় কৃষকরা এখন রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে।

ঘনিমহেশপুর গ্রামের মরিচ চাষি নজিব উদ্দীন জানান, ধান,পাট ও গম উৎপাদন করে প্রতি বছর লোকসান দিতে দিতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এ বছর বোরো ধান করে চরম লোকসানে পড়েছি। সেক্ষেত্রে মরিচ আবাদ করে আমরা টিকে আছি।

মরিচের আভায় ঢেকে গেছে লাল গালিচা
ছবি; আমাদের বাণী

হাসিম উদ্দীন নামে অপর একজন চাষি বলেন, এক বিঘা জমিতে মরিচ (বিন্দু ও বাঁশগাড়া) লাগানো, নিরানী, সেচ ও পরিচর্যা থেকে ক্ষেত থেকে মরিচ সংগ্রহ পর্যন্ত ব্যয় হয় প্রায় ১৪- ১৫ হাজার টাকা। আর ওই জমিতে মরিচ উৎপাদন হচ্ছে কমপক্ষে ১০ মণ। প্রতি মণ মরিচ ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি করে বিঘাপ্রতি ২০/২৫ হাজার টাকা লাভ পাওয়া যাচ্ছে। মরিচ বিক্রির টাকা ছেলেমেয়ের লেখাপড়াসহ সংসারের অন্যান্য চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে।

এদিকে, ক্ষেত থেকে মরিচ সংগ্রহ কাজে ব্যাপক সংখ্যক নারী ও শিশু-কিশোরের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিজন শ্রমিক কমপক্ষে ৮ ঢাকি মরিচ তুলতে সক্ষম হচ্ছেন। প্রতি ঢাকি ২৫ টাকা হিসেবে দিনে আয় করছেন কমপক্ষে ২শ’ থেকে ২৫০ টাকা। স্কুলের ছেলে মেয়েরাও বর্তমানে স্কুল ছুটিকে কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয় করছেন।

কৃষি বিভাগের মতে, চাষকৃত জমি হতে ১ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন শুকনা মরিচ উৎপাদন হবে যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরে বিক্রি করা হবে।

মরিচ কেনাবেচার জন্য সদর উপজেলার ভাউলার হাট এলাকায় রাস্তার ধারে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী মরিচের হাট। এখানে দূর-দূরান্ত হতে চাষিরা গাড়িতে করে শুকনা মরিচ নিয়ে আসছেন বিক্রির জন্য। ভোর থেকে বিক্রেতারা এখানে আসেন এবং ক্রেতারা এখান থেকে মরিচ কিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন।

কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আফতাব হোসেন জানান, মরিচ মসলার জাতীয় ফসল। মরিচ চাষ করে এ জেলার কৃষকেরা ভাল দাম পাওয়ায় তাদের আগ্রহ প্রকাশ পাচ্ছে। এ জেলার মাটি বন্যামুক্ত হওয়ায় উৎপাদিত মরিচ উন্নত মানের হওয়ায় এর চাহিদা সর্বত্র। বিভিন্ন ফসলে লোকসান গুনলেও একমাত্র মরিচ চাষ করে কৃষকরা লাভের মুখ দেখছেন। তাই এ ফসলটি অর্থকরী ফসল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জেলার চাষিরা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত মরিচ জেলার বাইরে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।