আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঠাকুরগাঁও জেলার সবজি চাষিরা। করলা, বেগুন, টমেটো, লাউ, লাল শাক, পালং শাক, শিম, শসা, মিষ্টি কুমড়া, ডাটা, চিচিঙ্গা, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ নানা শীতকালীন সবজির ফসল পরিচর্যায় বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছেন সবজি চাষি ও তাদের পরিবারের লোকজন।
চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও জেলায় এ বছর সময়মত বৃষ্টি না হওয়ায় চলতি বছর উঁচু জমিগুলোর বেশি ভাগ জমিতেই আমন ধান রোপণ করতে পারেনি তারা। তাছাড়া চলতি বছর ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় সেচ দিয়ে আমন ধান রোপণ করেননি তারা। উঁচু জমিগুলোতে আগাম শীতকালীন সবজির চাষাবাদের কাজেই লাগাচ্ছেন তারা। এছাড়াও ধান ও পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এবার বেশি লাভের আশায় আগাম শীতকালীন সবজিই মূল লক্ষ্য ঠাকুরগাঁও জেলার শীতকালীন সবজি চাষিদের। বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার শীতকালীন সবজি বেশি চাষ হবে বলে ধারণা করছেন ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি অধিদপ্তর। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সবজি ক্ষেতে কাজ করছেন । চলতি বছর  ঠাকুরগাঁও জেলার ৫টি উপজেলায় ৮ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। এতে উৎপাদন হবে ২ লাখ ৫ হাজার মেট্রিক টন শাক-সবজি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে এ সবজি পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ রাজধানীর মানুষের চাহিদাও পূরণ করবে ধারণা করছে ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢলোরহাট, মোলানখুড়ী, চামেশ্বরী গ্রাম বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার গোয়ালকারী, সাবাজপুর, মধুপুর, ফটিয়াপাড়া, কাশুয়া খাদেমগঞ্জসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে দিনমজুরদের সাথে ক্ষেত পরিচর্যা, রোগ-বালাই দমন ও অধিক ফলনের আশায় নাওয়া খাওয়া ভুলে দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন সবজি চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ১৫ দিনের মধ্যেই ক্ষেত থেকে উঠবে শীতকালীন শাক-সবজি। বাম্পার ফলন ও বেশি লাভ হবে এমনটাই প্রত্যাশা চাষি ও কৃষি বিভাগের।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের গোয়ালকারী গ্রামের সবজি চাষি করিমুল ইসলাম জানান, এ বছর উঁচু দেড় একর জমিতে করলা এবং এক একর জমিতে বেগুন চাষ করেছেন তিনি। করলার গাছে ফুল ধরা শুরু করেছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাজারে তোলার যাবে বলে ধারণা করছেন। বাবার সাথে মাঠে কাজ করছেন করিমুল ইসলামের ছেলে আইয়ুব আলী। তিনি জানান, অনাবৃষ্টির ফলে বেগুন ক্ষেতে সেচের পরিমাণ এবার বেশিও লাগছে। দ্রুত বাজারে তুলতে পারলে ন্যায্য মূল্যের পাশাপাশি ভাল লাভের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের সবজি চাষি নজরুল ইসলাম বলেন, এক বিঘা জমিতে করলা চাষে তিনি ১৪ হাজার টাকা খরচ করেছেন। বাজারে তোলা পর্যন্ত আরও এক হাজার টাকা খরচ হবে। এছাড়াও বেগুন ক্ষেতে প্রতি বিঘায় খরচ হচ্ছে ১২-১৬ হাজার টাকা।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সবজি চাষি হাসান আলী বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার শিক্ষিত বেকারও ঝুঁকছেন সবজি চাষে। এখন সবজি কম পাওয়া গেলেও মাস খানেকের মধ্যে ভরপুর হবে ঠাকুরগাঁওসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারগুলোতে। দাম কিছুটা বেশি হলেও ভোক্তারা স্বাদ নেবে এসব সবজির। আবুল হোসেন নামে এক যুবকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, গত ৪ বছর ধরে চাকরির জন্য চেষ্টা করছি। কৃষক বাবা একাই মাঠে পরিশ্রম করছেন। এখন চাকরির হাল ছেড়ে দিয়ে বাবার সাথে কাজ করছি।
আশা করছি সবজি চাষ করে পরিবারকে ভালো কিছু উপহার দিতে পারব। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ -পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সবজির বাম্পার ফলন হবে। এই এলাকার মাটি অনেক উর্বর তাই ফলন বেশি। এ অঞ্চলের সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
কৃষি বিভাগের জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ের কারিগরি সহায়তাসহ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। সবজি সংরক্ষণ কেন্দ্রে স্থাপন করাসহ সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ পেলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এ অঞ্চলের কৃষকরা ভূমিকা রাখবে এমন প্রত্যাশা সবার।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।