মোঃ মজিবর রহমান শেখ,  ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা; করোনা পরিস্থিতির কারণে কার্যত অবরুদ্ধ দেশ। এই পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া দুস্থ ব্যক্তিদের খাদ্য সহায়তায় বিশেষ ওএমএস কর্মসূচির চাল বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

ঠাকুরগাঁও জেলার পৌরসভায় চলমান এই কর্মসূচিকে ঘিরে নানা অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। একই নামে অনেক ব্যক্তিকে একাধিক কার্ড দেওয়া হয়েছে। আবার কেউ কেউ একাধিক ওয়ার্ড থেকেও কার্ড পেয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের ভোটার বিপুল গাঙ্গুলী। তবে তিনি বসবাস করেন পাশের ৩ নং ওয়ার্ডে। তাঁকে দুই ওয়ার্ড থেকেই বিশেষ ওএমএস কর্মসূচির তিনটি কার্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁর নামে বরাদ্দ কার্ডে দুই দফা চাল কেনাও হয়েছে। শুধু বিপুল গাঙ্গুলী নন, আরও অনেকের নামেই একাধিক কার্ড দেওয়ার অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। করোনা–পরিস্থিতি শুরুর পর কর্মহীন দুস্থ ব্যক্তিদের খাদ্য সহায়তার জন্য বিশেষ ওএমএস কার্ডের ব্যবস্থার উদ্যোগ নেয় সরকার। সেই অনুযায়ী ঠাকুরগাঁও জেলার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে মোট ৮ হাজার ৪০০ কার্ডের বিপরীতে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১০ টাকা কেজি দরে প্রতি মাসে ২০ কেজি করে চাল কার্ডপ্রতি বরাদ্দ হয়।

নীতিমালা অনুযায়ী, দিনমজুর, রিকশাচালক, পরিবহনশ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চায়ের দোকানদার, ভিক্ষুক, ভবঘুরে ও হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকজন এই বিশেষ কর্মসূচির সহায়তা পাবেন। ৪ নং ওয়ার্ডে বিপুল গাঙ্গুলীর কার্ড নম্বর ১৩১ ও ২১৫। আর ৩ নং ওয়ার্ডের কার্ড নম্বর ৪৮০। গত দুই বরাদ্দে ১৩১ ও ২১৫ কার্ডে স্থানীয় পরিবেশকের (ডিলার) কাছ থেকে ১০ টাকা কেজি দরের চাল কেনা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে একাধিক কার্ড পাওয়ার প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে এই প্রতিবেদক যোগাযোগ করলে তিনি ৩ নং ওয়ার্ডের কার্ডটি স্থানীয় কাউন্সিলর ওয়ালিউর রহমানের কাছে হস্তান্তর করেন।

বিপুল গাঙ্গুলী দাবি করেন, তাঁর নামে দুই ওয়ার্ডে তিনটি কার্ড থাকলেও তিনি ২১৫ নম্বর কার্ডের বিপরীতেই কেবল বরাদ্দ দেওয়া চাল কিনছেন। একইভাবে সরকারপাড়া মহল্লার বাসিন্দা ইলিয়াস মুন্সির স্ত্রী মোছা. মাহমুদার নামে ২ ও ৪ নং ওয়ার্ডে দুটি কার্ড দেওয়া হয়েছে। ২ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর কার্ড নম্বর ৮১ ও ৪ নং ওয়ার্ডে ১৬৬। ৮১ নম্বর কার্ডে এপ্রিল ও মে মাসের এবং ১৬৬ নম্বর কার্ড থেকে এপ্রিলের চাল কেনা হয়েছে।

গতকাল তিনি ৪ নং ওয়ার্ডের স্থানীয় পরিবেশক (ডিলার) পারভেজ খানের কাছে চাল কিনতে এলে, এই প্রতিবেদক একাধিক ওয়ার্ডে কার্ড থাকার বিষয়টি তুললে তিনি চাল না কিনেই চলে যান। এ ছাড়া একই ব্যক্তি একাধিক কার্ড পেয়েছেন, এমন অন্তত তিন ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডের হলপাড়া মহল্লার প্লেনশিট ব্যবসায়ী বাবুল শেখের নামে দুটি কার্ড দেওয়া হয়েছে।। তাঁর কার্ড নম্বরগুলো যথাক্রমে ৩৩ ও ২০৭। তাঁর নামে বরাদ্দ কার্ডে দুই দফা ৩০ কেজি করে চাল কেনা হয়েছে। একই ওয়ার্ডের সরকারপাড়া এলাকার মজিবর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানের নামে দুটি কার্ড বরাদ্দ হয়েছে। তাঁর কার্ড নম্বরগুলো যথাক্রমে ৮৬ ও ২৭৩। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কলেজপাড়া এলাকার যতীশ চন্দ্র করের ছেলে পিযুষ করের নামেও দুটি কার্ড করা হয়েছে। পিযুষের নামে করা কার্ডের নম্বর ২৯৪ ও ৪২৬। তবে তাঁদের নামে একাধিক কার্ড থাকার বিষয়টি তাঁরা জানেন না বলে দাবি করেছেন।

ওএমএস কর্মসূচির চাল বিক্রির জন্য ঠাকুরগাঁও পৌরসভার প্রতি ওয়ার্ডে দুজন করে পরিবেশক রয়েছেন। ৪ নং ওয়ার্ডে তাঁদের একজন পারভেজ খান। তিনি অসুস্থ থাকায় তাঁর ছেলে মোহাম্মদ রকি চাল বিক্রির কাজ দেখভাল করছেন। রকি বলেন, ‘নীতিমালা অনুযায়ী করোনার সময় খাদ্যসহায়তা কর্মসূচির উপকারভোগীদের তালিকা তৈরির দায়িত্বে ছিলেন সংশ্লিষ্ট পৌরসভার ওয়ার্ড কমিটি। যেখানে পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর উপদেষ্টা। তাঁরা তালিকা করার পর উপকারভোগীর হাতে কার্ড পৌঁছে দিয়েছেন। সেই কার্ড দেখেই আমরা চাল দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, একাধিক ব্যক্তির নামে কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কি না, তা খুঁজে দেখার সুযোগ থাকে না। তবে এসব সমস্যার কারণে এপ্রিল মাসের ১৩টি কার্ডের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া ১৩০ কেজি চাল এখনো গুদামে পড়ে রয়েছে বলে জানান তিনি। ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘তালিকায় নাম তোলার জন্য উপকারভোগীরা মেয়র, সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর, ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ জনপ্রতিনিধিদের কাছে তদবির করেন। পরে জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া নাম সমন্বয় করে তালিকা তৈরি করা হয়। এবার তালিকা তৈরিতে সমন্বয় না থাকায় একই নামে একাধিক কার্ড দেওয়া হয়ে গেছে। অভিযোগ পেয়ে আমরা আবার সেসব ভুল সংশোধন করছি।’

জানতে চাইলে পৌর মেয়র মির্জা ফয়সল আমীন বলেন, ‘ওয়ার্ড কমিটি খুবই সীমিত সময়ের মধ্যে উপকারভোগীর তালিকা চূড়ান্ত করেছে। কাজটি দ্রুত করতে গিয়ে অনেক ভুলভ্রান্তি রয়ে গেছে। একই নামে একাধিক কার্ডও দেওয়া হয়েছে। এখন সে ভুলগুলো বেরিয়ে আসছে। ভুলগুলো সংশোধনও করে যাচ্ছি।’

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, করোনা–পরিস্থিতিতে কর্মহীনদের তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করা পৌরসভার দায়িত্ব ছিল। সেখানে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। তবে অভিযোগ পেলে, তা খতিয়ে দেখা হবে।

আমাদের বাণী ডট/১৬ মে ২০২০/পিবিএ 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।