ঠাকুরগাঁও জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ধানের ন্যায মূল্য না পাওয়ায় হতাশায় দিনপার করছেন চাষিরা। ধান বিক্রি করে লাভ তো দুরের কথা আসল টাকাও তুলতে পারছে না এমন অভিযোগ চাষিদের। এমনকি বাজারে ধানের চাহিদা না থাকায় কাঁচা ধান নিয়ে বিপাকে পরেছেন তারা।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে জেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬২ হাজার ৩শ ৬০ হেক্টর আর অর্জিত হয়েছে ৬২ হাজার ৩শ ৫০ হেক্টর। কৃষি বিভাগ বলছে উৎপাদন গত বছরের তুলনায় এবার কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর প্রতি হেক্টরে চাল উৎপাদন হয়েছিল ৩.৮ টন আর এবার বৃদ্ধি পেয়ে ৪ টন হচ্ছে।

আশানরুপ ফলন হলেও ধান উৎপাদনে প্রয়োজনীয় সকল উপাদানের দাম বেশি থাকায় লোকশানের মুখে পরেছেন চাষিরা। গত মৌসুমের ধান ব্যসায়িদের ঘরে জমে থাকায় ধান ক্রয়ে তেমন আগ্রহ নেই ব্যবসায়িদের। তাই বাজারে ধানের চাহিদা না থাকায় দাম কমেছে ধানের।

১৬শ ৯০ টি হ্যাস্কিং মিল ও ১৭ টি অটো রাইস মিলের মাধ্যমে ৩০ হাজার ৬শ ১৯ মেট্রিকটন চাল ও ১ হাজার ৮শ ৫৭ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করবে সরকার। যা উৎপাদনের তুলনায় সামান্য। বালিয়াডাঙ্গী, রানীশংকৈল, হরিপুর, পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও সদর

এলাকার কৃষক আমিরুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, রফিকুল ইসলাম, রাজু, মজিবর, সাদেকুল ইসলাম ও হামিদুর জানান, বর্তমানে ঠাকুরগাঁও জেলার হাট বাজার গুলোতে প্রতি মন ধান ৩০০/৩৫০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। যেখানে প্রতি মন ধান উৎপাদন খরচ ৬০০/৬৫০ টাকা। এভাবে ধানের দাম প্রতিবার কম পাওয়ায় কৃষকরা লোকসানে পড়ছে। এর পরের বছর থেকে কোন কৃষক আর ধান চাষ করতে চাইবে না।

ঠাকুরগাঁও জেলা চাল কল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান রাজু বলেন, বর্তমানে বাজারে যে ধান আমদানি হচ্ছে তা কাঁচা ধান। সরকারি নিয়ম অনুযায়ি আদ্রর্তায় আনলে ৪০ কেজি ১০ কমে যাবে। তাই বাজারে ধানের দাম কম সত্য হলেও ভাল ধানের দাম কিছুটা ভাল আছে।

তিনি আরও বলেন, বিগত দিনের চেয়ে এবছর ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া গত আমন মৌসুমের ধান এখনও মিলারদের কাছে মজুত থাকায় ধান ক্রয়ের আগ্রহ নেই মিলারদের। মিলাররা যে পরিমাণ বরাদ্দ পেয়েছে তাতে গত মৌসুমের ধান শেষ হবে না। তবে সরকার যদি আরও বরাদ্দ দেয় তাহলে দাম কিছুটা বাড়তে পারে।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আফতাব হোসেন বলেন, ধান উৎপাদনের জন্য সকল উপাদন সময় মত পাওয়ায় ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষিদের ধান উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান বাজারে যে দাম তাতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তবে ধান শুকিয়ে সংরক্ষণ করলে পরে লাভবান হতে পারে।

এছাড়াও সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ি ধান চাষিদের তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আশা করি দ্রæত সময়ে ধান-চাল ক্রয় শুরু হবে। ব্যবসায়িরা ক্রয় শুরু করলে বাজার স্থিতিশীল হতে পারে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।