রাজধানী ঢাকাতে এবার ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ অন্যবারের তুলনায় অনেক বেশি। এই ডেঙ্গু জ্বর ঢাকা ছাড়াও অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে। চিকিৎসক ও গবেষকরা আশংকা করছেন এবার ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ থাকবে অক্টোবর পর্যন্ত। আর, তারা সকলকে আরও বেশি সচেতন থাকার কথা জানিয়েছেন।

ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে কিনা তা বুঝবেন কি করে?

ডেঙ্গুর লক্ষণ:

ডেঙ্গুর সাধারণ লক্ষণ জ্বর, এই জ্বর ১০১ থেকে ১০৩ ডিগ্রি থাকতে পারে। তাছাড়া, জ্বর ১০০ ডিগ্রির নিচে থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে। প্রচন্ড মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যাথা হতে পারে, জ্বরের সঙ্গে সারা শরীরে ব্যথা, গিটে গিটে ব্যথা হতে পারে। শিশুর শরীরে, এমনকি প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে লালচে ছোট দানা দেখা যেতে পারে, শিশুদের ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। জ্বর হলেই শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা অনেক বেশি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন। ৬-৮ ঘন্টার মধ্যে শিশুদের প্রস্রাব না হওয়া মারাত্মক লক্ষণগুলোর একটি, চোখ লাল হওয়া, কাশি বা শ্বাসকষ্ট হতে পারে।

পরিস্থিতি যদি গুরুতর হয় তাহলে শিশুর পেট ফুলে যেতে পারে। অনেক বমির সঙ্গে রক্তক্ষরণও হতে পারে। শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে যেমন: বমি, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া। এসব জটিলতা হলেই চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখলে যেসব রক্ত পরীক্ষা করাতে হয়:

সিবিসি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট)
এনএস ওয়ান (এন্টিজেন টেস্ট)
এসজিপিটি, এসজিওটি (ব্লাড সুগার, লিভারের পরীক্ষা)
যদি ডেঙ্গু ধরা পড়ে তাহলে কি করবেন?

যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আর, জ্বর হলে অবশ্যই বিশ্রাম নিতে হবে। প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খেতে হবে, বিশেষ করে ডাবের পানি, খাবার স্যালাইন, লেবুর শরবত, স্যুপ। এই ধরণের খাবার গ্রহণ করতে হবে অনেক বেশি পরিমাণে।

শিশুকেও মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি হবে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়াতে হবে।

ডেঙ্গুর ধরণ বুঝে সাধারণত রোগীদের প্যারাসিটামল দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। তারা বলছেন, প্যারাসিটামলের সর্বোচ্চ ডোজ হচ্ছে ৪ গ্রাম পর্যন্ত। কিন্তু, কোন রোগীর যদি হার্ট, লিভার ও কিডনি সংক্রান্ত সমস্যা থাকে তবে তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে অবশ্যই অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করা যাবেনা। অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ ডেঙ্গু রোগীর জন্য মারাত্মক সমস্যার কারণ হতে পারে।

ইদানিং দেখা যাচ্ছে প্লাটিলেট কাউন্ট নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন। চিকিৎসকেরা বলছেন এই নিয়ে উদ্বিগ্ন না হতে। বিশ্রাম ও পরামর্শমতে চলাটা জরুরি।

ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়?

ডেঙ্গু হলেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে এমনটা নয়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে রোগীর অবস্থা দেখে চিকিৎসকই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন। তবে, রোগীর জ্বর কমে গেলেও তার মধ্যে অন্য কোন লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে কিনা সেদিকে নজর রাখতে হবে। যেমন: প্রচুর বমি হওয়া ও পেটে ব্যাথা হওয়া। বিশেষ করে শিশুদের জ্বর কমে গেলেও দুই থেকে তিন দিন সার্বক্ষণিক নজরে রাখা প্রয়োজন।

ডেঙ্গুজ্বরের তিনটি ভাগ রয়েছে- এ, বি ও সি।

‘এ’ ক্যাটাগরির রোগীরা নরমাল থাকে, তাদের শুধু জ্বর থাকে।
‘বি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীদের সবই স্বাভাবিক থাকে। তবে, তাদের শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন: পেটে ব্যথা, বমি হওয়া। অনেক সময় দেখা যায় জ্বর কমে যাওয়ার দুই দিন পর রোগীর শরীর অনেক ঠান্ডা হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই ভালো।
‘সি’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু জ্বর সবচেয়ে খারাপ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইসিইউ’র প্রয়োজন হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর চলে গেলে কি করবেন?

জ্বর সেরে গেলেও বিশ্রাম নিতে হবে এবং প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে। চিকিৎসকেরা বলছেন, অনেক সময় চার-পাঁচদিন চলে গেলেও ডেঙ্গু রোগীরা পুরোপুরি সুস্থ হননা।

ডেঙ্গু জ্বর সেরে গেলে পরিচর্যা:

জ্বর সেরে গেলেও ১০-১৫ দিন বিশ্রাম নিতে হবে, কোন ভারি কাজ করা যাবেনা।

ডেঙ্গু একাধিকবার হতে পারে, আর দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলেই জটিলতা বেশি দেখা যায়। জ্বর হলে অবহেলা করা যাবেনা। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে। মশা থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে হবে। আর, সে কারণে যে ব্যবস্থা নেয়ার তা গ্রহণ করতে হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।