বান্দরবানের থানছি উপজেলার দূর্গম রেমাক্রি ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের পরিবার কল্যাণ সহকারী ওয়ানুচিং মারমা যেনো এই দূর্গম পাহাড়ে অন্তসত্তা মায়েদের কাছে আশার আলো। দিনের বেলা অফিস শেষে সবাই যখন নিজের কাজে ব্যাস্ত তখন ও ওয়ানুচিং মারমা ছুটে যান সন্তান সম্ভবা কোন বিপদগ্রস্ত নারীর ডাকে।

পেশায় পরিবার কল্যাণ সহকারী হলেও প্যারামেডিস এ ঢাকা জি.কে হাসপাতালে চারবছরের কোর্স করেছেন তিনি।

তাই প্রসুতি মায়ের ডেলিভারী তে তার রয়েছে বিশেষ দক্ষতা।এখন পর্যন্ত তিনি বিপদগ্রস্ত অসহায় ৪০ থেকে ৫০ জন মহিলাকে সেবা দিয়ে তাদের নব জাতক সন্তান কে নরমাল ডেলিভারী করে সুস্হ ভাবে পৃথিবীতে আসতে সাহায্য করেছেন।

গত ১৫ নভেম্বর রাত আনুমানিক ৯ টায় মংশৈঅং মারমা পাড়া তিন্দু ইউনিয়নের এক গর্ভবতী নারী মূমুর্ষ অবস্হায় মৃত্যুপথ যাত্রী এমন সংবাদে গভীর অন্ধকার আর চারপাশের ভৌতিক নিরবতাকে পাশ কাটিয়ে ছুটে যান ওয়ানুচিং মারমা।তারপর টানা ২ ঘন্টার আপ্রাণ চেষ্টায় নিরাপদে পৃথিবীর আলোতে নিয়ে আসেন এক নবজাতক শিশুকে। তার অসাধারণ দক্ষতায় সেদিন বেঁচে যায় দুটি প্রাণ।

এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারীতায় ওয়ানুচিং মারমা জানান, মানুষের জন্যই তো মানুষ। যেহেতু রেমাক্রী ইউনিয়ন মারাত্মক একটি দূর্গম এলাকায় অবস্হিত তাই এখানে রাত বিরাতে কোনো নারীর হঠ্যাৎ প্রসব বেদনা উঠে গেলে তখন সেখানে যাবার মতো কাউকে তেমন পাওয়া যায় না।এটা আমি ছোট বেলা থেকেই দেখে এসেছি,তাই নিজে প্যারামেডিক প্রশিক্ষণ নিয়ে গর্ভবতী মায়েদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।আর এই কাজে আমাকে আমার স্বামী সর্বাত্মক ভাবে সার্পোট করে যাচ্ছেন।তার অনুপ্রেরণা আমাকে এই কাজে আরো বেশী উৎসাহ প্রদান করে।

এই বিষয়ে উছাইহ্লা মারমা নামের রেমাক্রি মংম্যা পাড়ার এক বাসিন্দা এই প্রতিবেদক কে জানান তিনি আমার সন্তান ও স্ত্রী কে নতুন জীবন দান করেছেন।গভীর রাতে যখন আমার সহধর্মীনি প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছিলেন তখন কোনো ডাক্তার কে খুঁজে না পেয়ে শরণাপন্ন হয়েছিলাম ওয়ানুচিং মারমার কাছে,তিনি আমাকে নিরাশ করেননি। বলার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়েছেন আমার বাড়িতে।
এলাকার সবাই ওয়ানুচিং কে ভালোবেসে মারমা ভাষায় আলাংরং বলে ডাকেন যার বাংঙলা অর্থ আশার আলো।

স্হানীয় দের সাথে কথা বল জানা যায়, যেকোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ হলে ও তিনি কোন বিপদগ্রস্ত গর্ভবতী মায়ের ডাকে ছুটে যান।

আদমং পাড়া , মংম্যা পাড়া, রেমাক্রী বাজার, কলা পাড়া, নতুন পাড়া, ক্যবু পাড়া, উ হ্লা চিং পাড়া, যিশুরাং পাড়া হামাজন পাড়া , দুলু পাড়া, চম্পাত পাড়া খংচং পাড়া, ঞো চিং অং পাড়া কালু পাড়া,অতিরাং পাড়া, ক্য শৈ চিং পাড়া, চাই হ্লা উ পাড়া, রুংজাং পাড়া মেমং পাড়া দলিয়ান পাড়া সহ ইউনিয়ের বেশীর ভাগ মানুষের সাথে ওয়ানুচিং মারমার সেবার বিষয়ে কথা বললে তারা এই প্রতিদেবক কে জানান,এলাকায় বিদ্যুত নেই,নেটওয়ার্ক নেই তাই সরকারী সরকারী কোনো ডাক্তার ই এলাকায় নিয়মিত থাকেন না।অথচ ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নিয়মিত উপস্হিত থেকে আমাদের কে বিভিন্ন ভাবে সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন তিনি।

তবে নিরলস ভাবে কাজ করে যাওয়া এই পরিবার কল্যাণ সহকারী এখন পর্যন্ত সরকারী ভাবে কোন রকম পুরস্কারে ভূষিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার সর্বস্তরের মানুষ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।