নাগামরিচের উৎপাদন বেশী হওয়ার চাষীরা নাগামরিচ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। নাগামরিচের আতুরঘর হচ্ছে সিলেট। বিশেষভাবে বললে শ্রীমঙ্গল ও কানাইঘাটের জৈন্তাপুর এলাকার কথা বলতে হয়। এবার সিলেটের জৈন্তাপুরে নাগামরিচের উৎপাদন হয়েছে বেশী। আর জৈন্তাপুরের উৎপাদিত নাগামরিচ এখন দেশেরগন্ডি পেরিয়ে ইউরোপে যাত্রা শুরু করেছে অর্থাৎ রপ্তানী হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্টদের সুত্রে জানা গেছে, চলিত মৌসুমে জৈন্তাপুর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ১৫০ হেক্টর জমিতে নাগা মরিচের চাষ হয়েছে। প্রান্তিক চাষীরা এরই মধ্যে স্থানীয়ভাবে নাগা মরিচ বাজারজাত করতে শুরু করেছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার (বিসিএস) সুব্রত দেবনাথ জানিয়েছেন, জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত, নিজপাট ফতেপুর ও চারিকাটা ইউনিয়নসহ অন্যান্য এলাকার গ্রামীণ কৃষকরা বিগত দুই বছর থেকে নাগা মরিচ চাষ করছেন। বিগত বছর ২০১৮ সালে ১২০ হেক্টর এবং চলিত বছর ১৫০ হেক্টর কৃষি জমিতে নাগা মরিচ চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নিবিড় পর্যবেক্ষণ থাকায় এ বছর ভালো ফসলের সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, নাগা মরিচ বিদেশে রপ্তানী করতে ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীরা প্রান্তিক কৃষকদের সাথে চুক্তি করেছেন। বিদেশে রপ্তানী করতে প্রাথমিকভাবে উপজেলার ১শ’ জন কৃষকের তালিকা তৈরী করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নাগা মরিচ চাষে আগ্রহী কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় সহযোগিতা করে যাচ্ছে। নাগা মরিচ চাষে উৎসাহিত করতে কৃষকদের নিয়মিত উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, উপজেলার আবহওয়া নাগা-মরিচ চাষের অনুকূলে থাকায় এই এলাকায় চাষ দিন দিন বাড়ছে। উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের, সারীঘাট চৈলাখেল, হেলিরাই, বারগতি, নয়াগতি, ঢুপি, চারিকাটা ইউনিয়নের রামপ্রসাদ, দরবস্ত ইউনিয়নের বেধু হাওর, লাইন নদীর পার্শ্ববর্তী খরিলহাট মাদ্রাসা সংলগ্ন জায়গায় সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ করা হয়েছে। জৈন্তাপুর ইউনিয়নের বিরাখাই-বাউরভাগ,ফতেপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাগেরখাল এলাকায় নাগা মরিচ চাষে কৃষকরা এগিয়ে এসেছেন। দরবস্ত ইউনিয়নের বেধু হাওর এলাকায় অন্তত ৪শ’ বিঘা জায়গা জুড়ে দরবস্ত শ্রীখেল গ্রামের তালিকাভুক্ত চাষ করছেন।

বিরাখাইয়ের এক কৃষক জানান, তিনি এবার ৭ বিঘা জমিতে নাগা মরিচ চাষ করছেন। ২০১৭ সাল থেকে তিনি নিয়মিত নাগা মরিচ চাষ করে আসছেন। গত শীত মৌসুমে তিনি ১০ বিঘা জমিতে নাগা মরিচ চাষ করেছিলেন। ওই সময় তিনি ৯ লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করেন। এর মাধ্যমে তার ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। তিনি বলেন, নাগা মরিচ চাষে সরকারীভাবে সহযোগিতা করা হলে গ্রামীণ জনপদের কৃষকরা আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হবেন।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে অন্তত: ৯শ’ থেকে ১ হাজার চারা গাছ রোপণ করা হয়ে থাকে। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ২০/২৫ হাজার নাগা মরিচ উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একটি গাছে ২শ’ থেকে ৩শ’ মরিচ উৎপাদন হয়। বাণিজ্যিকভাবে বাজারে একটি নাগা মরিচ ২/৩ টাকায় বিক্রি করা হয়।

বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল এন্ড এলাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের মহাসচিব কৃষিবিদ মনজুর হোসেন জানান, জৈন্তাপুর থেকে সংগৃহীত নাগামরিচ ঢাকায় প্রক্রিয়াজাত করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হয়। তাদের সংগঠন এ ক্ষেত্রে রপ্তানীকারক এবং কৃষকদের টেকনিক্যাল সহযোগিতা প্রদান করে থাকে।

রাজধানী ঢাকার রপ্তানীকারক এনএইচবি কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী নাজমুল হায়দার ভুইয়া জানান, সিলেট অঞ্চলে উৎপাদিত নাগা মরিচের চাহিদা সবচাইতে বেশী লন্ডনে। অন্যান্য দেশেও ব্যপক চাহিদা রয়েছে সিলেটি নাগামরিচের।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।