মৃদু শৈত্যপ্রবাহে জবুথবু দেশ। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকা শনিবার ও শুক্রবার দিনভর ছিল কুয়াশায় ঢাকা। অবশ্য কয়েক দিন ধরেই তিরতির বাতাস আর কনকনে ঠাণ্ডায় জনজীবনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হচ্ছে। দেখা দিয়েছে নানা রোগব্যাধি। সাধারণ ঠাণ্ডাজনিত সর্দি, কাশি ও জ্বর ছাড়িয়ে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ রোগের প্রকোপ হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। সারা দেশে প্রতিদিনই শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রে ছুটছে মানুষ।

কেবল গত দু-তিন দিনেই নয়, গত নভেম্বর থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দিয়েছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। সরকারি হিসাবেই গত ৫০ দিনে সব মিলিয়ে প্রায় দুই লাখ ৩৮ হাজার ৪৬৩ জন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ৪৯ জনের।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ আরো কিছু কারণে মৌসুমি রোগের প্রকোপ আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে শীতজনিত রোগে বাংলাদেশে মানুষের ঝুঁকি ও ভোগান্তি তীব্র হয়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে একদিকে যেমন মানুষের সচেতনতার অভাব, অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি নানা ব্যবস্থাপনায় বড় ঘাটতি রয়েছে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ পরামর্শ দিয়ে বলেন, শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষায় প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া, ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলা, গরম কাপড়চোপড় ব্যবহার করা, ঠাণ্ডা পানি পরিহার করা, গরম খাবার ও গরম পানি ব্যবহার করা, প্রয়োজনমতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। তিনি বলেন, ঠাণ্ডায় যাদের আগে থেকেই শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা আছে তাদের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করে। তাদের অধিকতর সতর্ক থাকতে হবে। বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি। পরিবারের অন্যদের তাদের দিকে বেশি নজর রাখতে হবে। এ ছাড়া সাধারণ জ্বর, সর্দি ও কাশি হলেই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ সব সর্দি, কাশি ও জ্বর জীবাণু থেকে হয় না, ভাইরাসের কারণেও এই সময়ে এসব বেশি হয়ে থাকে। ফলে ভাইরাসজনিত রোগে কখনোই অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর হবে না।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. শফি আহমেদ মুয়াজ বলেন, ‘শীত শুরু হওয়ার পর থেকেই শিশুদের নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ অন্যান্য শীতজনিত রোগ বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই আমাদের হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা ভর্তি হচ্ছে। তাই শিশুদের ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকা দরকার। শিশুদের ঠাণ্ডা থেকে রক্ষার জন্য ঘরে-বাইরে উপযুক্ত পরিবেশ রাখতে হবে। বাইরে বের হলে অবশ্যই শরীর, মাথা ও কান ভালোভাবে গরম কাপড়ে আবৃত করে নিতে হবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ কন্ট্রোলরুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার জানান, গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় শীতজনিত রোগে চিকিৎসা নিয়েছ ছয় হাজার ৭৮ জন। এর মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৮৫৩ জন। একই সঙ্গে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে দুই হাজার সাতজন। এ ছাড়া গত ১ নভেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫০ দিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৪৬৩ জন। এর মধ্যে শ্বাসতন্ত্র ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৩৮ হাজার ২৩৯ জন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে ৯৭ হাজার ৪৩৬ জন এবং শীতজনিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ দুই হাজার ৭৮৮ জন।

ওই কর্মকর্তা জানান, মৃতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে পঞ্চগড় ও খাগড়াছড়ির মানুষ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।