নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা; প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠ্যক্রমে বড় ধরনের পরিবর্তনে জোরালোভাবে কাজ করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি। একাদশের আগে মাধ্যমিকে তুলে দেয়া হচ্ছে বিভাগ-বিভাজন। এ জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে রূপরেখাও তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও যুগোপযোগী করতে সরকারের পরিকল্পনা মাফিক এসব বিষয় নিয়ে পুরোদমে কাজ চলছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিভাগ না রাখার যে নির্দেশনা দিয়েছেন সে অনুয়ায়ী কারিকুলাম পরিমার্জনের কাজ চলছে। এ কারিকুলাম বাস্তবায়িত হলে একাদশ শ্রেণির আগে আর কোনো বিভাগ থাকবে না। নতুন শিক্ষাক্রমে ২০২১ সাল থেকে প্রাথমিক স্তরের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণির বই দেয়া শুরু হবে। এরপর ২০২২ সালে দেয়া হবে প্রাথমিকের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের সপ্তম, নবম ও শ্রেণির বই। পর্যায়ক্রমে ২০২৩ সালে পঞ্চম, অষ্টম ও দশম শ্রেণির বই দেয়া হবে। আর ২০২৪ সালে উচ্চমাধ্যমিকের একাদশ এবং ২০২৫ সালে দ্বাদশ শ্রেণির বই দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা ঢা বলেন, ‘শিক্ষাক্রম পরিমার্জনের লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ২০১৭ সাল থেকে এবং মাধ্যমিকে ২০১৮ থেকে কাজগুলো হচ্ছে। আমরা দেখেছি কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত কোনো বিভাজন রাখে না। কিন্তু আমাদের দেশে দীর্ঘদিন পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে আলাদা শিক্ষক্রম চলছিল যা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি নয়। সে কারণে আমরা এবার উদ্যোগ নিয়েছি যে প্রাক-প্রাথমিকে থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত একীভূত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলব। তবে আমরা শিক্ষাক্রম পরিমার্জনে সরকারপ্রধানের ইতিবাচক সায় এর অপেক্ষায় ছিলাম।’

এনসিটিবি সূত্র মতে, পৃথিবীর প্রায় ৯০ ভাগ দেশ বিভাগ বিভাজন ছাড়াই কম্পিটেনসিবেজড শিক্ষা ব্যবস্থায় চলে গেছে। বাংলাদেশও বিভাগ বিভাজন তুলে দিয়ে যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা অনুসরণ করবে। ফলে একজন শিক্ষার্থী যথাযথ শিক্ষা নিয়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে। এসব দিক বিবেচনা করেই পাঠ্যক্রম পরিমার্জনের কাজ চলছে।

নতুন পাঠ্যক্রম কার্যকরের বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘কারিকুলাম পরিমার্জনে রিসার্চের কাজগুলো শেষ হয়েছে। গত ছয় মাস ধরে রিভিশনের কাজগুলো করা হচ্ছে। ‘অষ্টম শ্রেণি পাস করা একজন শিক্ষার্থী নবম শ্রেণিতে সাইন্স-আর্টস-কমার্স কোনটা পড়বে এ বিষয়টি নিয়ে তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ওপর এটা আরোপিত হয়। দেখা যায় তার পড়ার আগ্রহ হয়তোবা অন্য দিকে থাকে কিন্তু বাবা-মায়ের আগ্রহটা আরেক রকম থাকে। এভাবে তার আগ্রহটা নষ্ট হয়ে যায়। আরেকটি বিষয় হলো নবম ও দশম শ্রেণিতে যে বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলো রয়েছে গ্রামাঞ্চলে সেগুলো পড়ান যে বিজ্ঞান শিক্ষকেরা তারা মূলত বিএসসি পাস। তারা ডিগ্রি লেভেলে পদার্থ কিংবা রসায়ন এগুলো পড়েনি। তারা উদ্ভিদবিজ্ঞান ও প্রাণিবিজ্ঞান মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ফলে ইন্টারমিডিয়েটের জ্ঞান নিয়ে শিক্ষক যখন নবম দশম শ্রেণির পদার্থ রসায়ন পড়াতে যান তখন সেটা তিনি পড়াতে পারছেন না। শিক্ষার্থীরা তার কাছ থেকে উপযুক্ত বিষয়ের জ্ঞানটা নিতে পারছে না।’

এ কারণে গ্রামাঞ্চলে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় উল্লেখ করে এনসিটিবির এই সদস্য বলেন, ‘এর ফলে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের একটা অনীহা তৈরি হয়। আবার যে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীরা পাস করে বের হয় তাদের সামাজিক বিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা খুব কম থাকে। ফলে তারা হয়তো খুব ভালো ফলাফল নিয়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হয় কিন্তু তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার ব্যাপারগুলোর অনেক ঘাটতি থেকে যায়।’

আমাদের বাণী ডট কম/১২ মার্চ ২০২০/পিপিবি 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।