জিকরুল হক, উত্তরাঞ্চল সংবাদদাতা; নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে নাটকিয় কায়দায় এক পাথর ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হয়। পরে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ঝালকাঠি থেকে প্রাণে রক্ষা পান ওই ব্যবসায়ী। অপহৃত ব্যবসায়ীর নাম শেখ ফরিদ (৪৪)। তিনি শহরের নতুন বাবুপাড়ার সাদ্দাম মোড় এলাকায় বাস করেন। তার পৈত্রিক বাড়ি পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া উপজেলা দেবনগরের কানিয়ামনি গ্রামে।

আজ বুধবার সৈয়দপুর শহরের বাসায় বসে সকালে শেখ ফরিদ অপহরণ ঘটনার আদ্যপ্রান্ত সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।

শেখ ফরিদ জানান, প্রায় তিন মাস ধরে ঢাকার গুলশান-১ এর অধিবাসী মাহাতাবের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে তিনি পাথর ব্যবসা করে আসছিলেন। এরই মধ্যে মাহাতাব প্রস্তাব দেয় যে বরিশালের শাহজাহান হাওলাদার ওরফে মামুন নামের ব্যক্তি মোটা অংকের টাকার পাথর কিনবেন। আমি তার কথামত ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে বিমানযোগে সৈয়দপুর থেকে ঢাকায় পৌঁছি। এ সময় আমার সঙ্গে ছিলেন শ্যালক নূরুল ইসলাম। ঢাকা বিমানবন্দর টার্মনালে পৌঁছে দেখতে পাই মাহাতাব আমাদেরকে বহন করার জন্য একটি প্রাইভেট কার পাঠিয়েছে। আমরা দুজন প্রাইভেটকারযোগে বরিশালে রাতে পৌঁছি। সেখানে আবাসিক হোটেল রোদেলায় আমাদের জন্য রুম বুক করা ছিল। পরদিন ২০ সেপ্টেম্বর সকাল বেলা আমার টাকার বিশেষ প্রয়োজন হলে টাকা উত্তোলনের জন্য আমি উত্তরা ব্যাংক লি. বরিশাল শাখায় যাই। এ সময় মাহাতাব আমাকে ফোন দিয়ে আমার অবস্থান জানতে চায়। আমি বলি উত্তরা ব্যাংকে আছি। ব্যাংক থেকে সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা চেকের মাধ্যমে তুলে আমার সাথে থাকা ব্যাগে রেখে নীচে নেমে দেখি মাহাতাব প্রাইভেট কার নিয়ে ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি তাকে দেখতে পেয়ে বলি এখানে সোনালী ব্যাংকের শাখায় আমাকে যেতে হবে। এই ব্যাংকের মাধ্যমে একজনকে টাকা পাঠাতে হবে। তখন সে আমাকে বলে এখানে কোথায় সোনালী ব্যাংক আছে, আপনিতো চিনেন না। গাড়ীতে বসেন আপনাকে আমি সোনালী ব্যাংকে নিয়ে যাচ্ছি। তার কথামত আমি প্রাইভেটকারে বসি। কার চলতে থাকলো। আমি বললাম ব্যাংকে যেতে হবে, তখন তিনি বললেন শাহাজাহান হাওলাদার ওরফে মামুন সাহেবের সঙ্গে দ্রুত  দেখা করতে হবে। না হলে তিনি চলে যাবেন, ফিরে এসে ব্যাংকের কাজ শেষ করা যাবে। আমি তার ওই কথামত কারে বসে থাকলাম। আমরা বেলা ১২ থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে শাহজাহান হাওলাদার ওরফে মামুন সাহেবের ঝালকাঠি পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ডের মধ্য চাদকাঠি ব্র্যাক মোড়ের (রূপনগর) বাসা পল্লী নিবাসে পৌছলাম। এটি একটি নির্জন বাড়ি। কেয়ারটেকার ছাড়া কেউ সেই বাড়িতে অবস্থান করে না। ওই বাড়ির প্রধান ফটক দিয়ে বাড়িতে প্রবেশের সময় আমার সঙ্গে থাকা শ্যালক বাড়িটির এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখতে গিয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে। পরে সে আমাকে ইশারায় ডাকলেও তার কথায় কোন কর্ণপাত না করে মাহাতাবের সঙ্গে শাহজাহান হাওলাদার ওরফে মামুন যে রুমে বসে আছে সেই রুমে প্রবেশ করি।

এরপর পাথরের দাম দর ভাল মন্দ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এ সময় আকস্মিকভাবে অজ্ঞাত পরিচয় আরো চারজন লোক ঘরে প্রবেশ করে। তারা প্রবেশ করেই আমার প্রতি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ঘরে লুকিয়ে রাখা রামদা তাক করে বলে ব্যাটা ৫০ লাখ টাকা দে, নইলে তোকে এখানেই শেষ করে ফেলবো। এমন কথা বলতে বলতেই মাহাতাব ও শাহজাহান হাওলাদার মামুনসহ ওইসব ব্যক্তিরা আমাকে পিছ মোড়া করে বেধে বিছানায় শোয়ায়। এরপর বলে তুই যাকে সাথে করে এনেছিস ওকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। তুই টাকা দে, নইলে তোকেও শেষ করে পুকুরে লাশ ফেলে দেয়া হবে। আমি তাদের কথা শুনে বলি আমার কাছে নগদ সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা আছে, আর চেক আছে। তারা নগদ টাকা নিয়ে উত্তরা ব্যাংক পঞ্চগড় শাখার হিসাব নং ০০১২২০০০০৩৭১ এর অনুক‚লে আমাকে দেয়া চেক বইয়ের ১৩৮৭৬৩২ নং পাতায় ৪০ লাখ টাকা আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা ঠেকিয়ে লিখে নেয়। তার আগে আমাকে প্রচন্ড রকমের কিলঘুষি মেরেছে।আমি তাদের কথামত চেক লিখে দিলে তারা আমাকে ও আমার শ্যালককে প্রাইভেটকার যোগে বরিশাল যাওয়ার টার্মিনাল রেখে যায়। আর বলে যে এদিকে আর ভুলেও ফিরে তাকাবে না। আমাদের টার্মিনালে রেখে তারা চলে গেলে আমরা ঝালকাঠি থানায় যাই। ঘটনার বর্ণনা দেই থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি)।

ওসি খলিলুর রহমান আমাদের কথা শুনে মামলা দায়ের করতে কালক্ষেপণ শুরু করে। পরে আমি বিষয়টি পঞ্চগড়ের অধিবাসি রেলমন্ত্রী অ্যাড. নূরুল ইসলাম সুজনকে বলি। তিনিও ওসিকে মামলা নিতে বলেন। কিš‘ রেলমন্ত্রীর কথাকেও ওসি পাত্তা দি”িছল না। অবশেষে ওই এলাকার সাংসদ ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রীর টেলিফোন পেয়ে ওসি ২৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মামলা রেকর্ড করে। মামলার এজাহারে মাহাতাব ও শাহাজাহান হাওয়ালদার ওরফে মামুনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলা থানায় রেকর্ড হওয়ার পর অত্যন্ত গোপনে ঝালকাঠি ত্যাগ করে সোমবার ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে বাসায় ফিরে আসি। ক্লান্ত শরীরে বিশ্রাম নিয়ে আজ বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ঘর থেকে বের হতে চাইছি।

জানতে চাইলে ঝালকাটি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খলিলুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আসামীদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে।

আমাদের বাণী ডট কম/৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০/পিপিএম

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।