ডেস্ক রিপোর্ট, ঢাকা;  বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর ৩৫ উর্দ্ধো নিয়োগ বঞ্চিত নিবন্ধিত শিক্ষকরা নিয়োগের দাবিতে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর আবেদন জানিয়েছেন। ৩৫ উর্দ্ধো নিয়োগ বঞ্চিত নিবন্ধিত শিক্ষক কেন্দ্রীয় ফোরাম কর্তৃক শিক্ষামন্ত্রী বরাবর প্রেরিত আবেদনটি আমাদের বাণী ডট কম পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হল;

বরাবর,
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী,
ডা. দীপু মনি, এম.পি.

বিষয়ঃ ৩৫ উর্দ্ধো নিয়োগ বঞ্চিত নিবন্ধিত শিক্ষকদের আপিল নিষ্পত্তি করে জৈষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার দাবি প্রসঙ্গে ।

জনাব,
যথাবিহিত সম্মান পূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা ২০০৫ সালের বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন আইনের ২১ ধারা ক্ষমতা বলে গঠিত এনটিআরসিএ কর্তৃক নিবন্ধিত ও প্রত্যয়নকৃত শিক্ষক। আপনার মত ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ও নীতিবান লোককে মন্ত্রী হিসেবে পেয়ে আমরা খুবই গর্বিত। আপনি শিক্ষাখাতকে উন্নতির চরম শিখরে আরোহন করাতে পারবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।

অতীব দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, এনটিআরসিএ এর হ-য-ব-র-ল নিয়ম কানুন ও হঠকারিতার কারণে ৩৫ উর্দ্ধো নিবন্ধিত শিক্ষকগণ বড়ই হতাশা ও নির্মম পরিস্থিতির মধ্যে জিন্দালাশের ন্যায় দিন কাটাচ্ছি। আপনি বলেন তো, এমন কোন মন্ত্রণালয় বা প্রতিষ্ঠান আছে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের রায় অগ্রাহ্য করে?

আমরা গত ১৯/১২/২০১৮ইং তারিখে প্রকাশিত গণ বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে না পেরে মহামান্য হাইকোর্টে রিট দাখিল করি। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট শাখা গত ২/১/২০১৯ইং তারিখে ১৫৭৬৭/২০১৮নং রিট সহ তিনটি রিটের শুনানির শেষে মহামান্য হাইকোর্ট বলেন, “রিট পিটিশনকারীদের অন্য কোনো অযোগ্যতা না থাকলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের উদ্দেশ্যে প্রকাশিত গণ বিজ্ঞপ্তিতে ৩৫ উর্দ্ধো পিটিশনকারীদের আবেদন গ্রহণ করে নিয়োগ দেওয়া হউক।”

এ ডিরেকশন পাওয়ার পর আমরা এনটিআরসিএ কে আবেদন গ্রহন করার অনুরোধ করি কিন্তু আমাদের আবেদন গ্রহণ করেনি।

পক্ষান্তরে গোপনে চেম্বার কোর্টে আমাদের ১৫৭৬৭/২০১৮ রিটসহ ৮টি রিটকে স্টে করে এনটিআরসিএ। আমরা নিরূপায় হয়ে দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারের উপর আস্তা রেখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা নিজেদের অধিকার ফিরে পেতে রক্তমিশ্রিত টাকা মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদেরকে ফি হিসেবে দিয়ে চেম্বার কোর্টে স্টে ভ্যাকেটের আবেদন করি যার সিএমপি নং ৩৬/২০১৯ এবং সিপি নং ৪৮৬/২০১৯ এবং মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কোর্টে মহামান্য প্রধানবিচারপতিসহ বিজ্ঞ বিচারপতিগণ স্টে ভ্যাকেট করেন এবং হাইকোর্টের ২/১/২০১৯ইং তারিখের রায় বহাল রেখে আবারো ৩৫ উর্দ্ধো পিটিশনকারীদের নিয়োগ দেবার নির্দেশ দেন মহামান্য প্রধানবিচারপতির কোর্ট।

তারপরেও এনটিআরসিএ আমাদের আবেদন গ্রহণ করেনি। এতে কি প্রমাণ হয় না যে, বাংলাদেশের মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের ডিরেকশনের কোনো মুল্য নাই, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ কোর্ট থেকেও এনটিআরসিএ বড়?
এমতাবস্থায় আমরা বড় অসহায় হয়ে পড়েছি।

অতঃপর গত ২২/৫/২০১৯ইং তারিখে মহামান্য হাইকোর্টের ২৫নং কোর্ট একটি পুর্ণাঙ্গ রায় দেন ৩৫ উর্ধ্বো নিবন্ধিত শিক্ষকদের সনদের বৈধতা পাই। মহামান্য হাইকোর্ট বলেন, “১২/৬/২০১৮ইং তারিখের পূর্বে যারা সনদ অর্জন করেছেন তাদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা প্রযোজ্য নয়। শুন্যপদ থাকা সাপেক্ষে তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হউক।”

উক্ত রায়কে এনটিআরসিএ আবারো আপিল করে চেম্বারকোর্ট থেকে ১০ফেব্রয়ারী ২০২০ইং তারিখ পর্যন্ত স্টে নিয়ে ২য় নিয়োগের গণ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৩৫ উর্দ্ধো নিবন্ধন ধারীগণকে বঞ্চিত করেন এনটিআরসিএ ।

আমরা বুকের তাজা রক্ত মিশ্রিত টাকা খরচ করে উকিলের ফি কোর্ট ফি দিয়ে সংবিধান ও আইন অনুযায়ী রায় পাবো আর এনটিআরসিএ চালাকি করে বঞ্চিত করে নিয়োগ দিয়ে আমাদেরকে চির বেকার রাখবে সেটা কিভাবে মানা যাই?
তারপর গত ১০ফেব্রয়ারী ২০২০ইং তারিখে সিপি নং ৩৯০০/২০১৯টি টপ অব দ্যা লিষ্টে থাকার কথা থাকলেও এনটিআরসিএ বেআইনিভাবে তদবির করে সিপি ৩৯০০/১৯ এর লিষ্টকে টপ না দিয়ে অনেক পিছনে দেয়। যাতে করে আমরা তারাতাড়ি শুনানি করাতে না পারি। এতে কী প্রমাণ হয় মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী?

এনটিআরসিএ জানেন, আমাদের দাবি আইন সম্মত তাই মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট ৩৫ উর্দ্ধোদের পক্ষেই রায় দিবে এজন্য অসৎ উদ্দেশ্যে গোপনে তদবির করে আইনের কাজকে বিলম্ব করেছে এনটিআরসিএ। শেষপর্যন্ত করোনার কারণে বন্ধ না হলে মার্চ মাসেই আমরা আপিলের রায় পেয়ে যেতাম কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস করোনার কারণে কোর্ট বন্ধ। এ অবস্থায় আপনিই আমাদের আশা ভরসা।

মাগো, আপনিতো জানেন, কোনো বিষয়ে আদালতে মামলা পেন্ডিং থাকলে উক্ত বিষয়ে কোনোভাবেই রায় পরিপন্থি কিছু করা যাই না কিন্তু এনটিআরসিএ বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোন ক্ষমতার বলে আপিল নিষ্পত্তি না করে গণ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার চেষ্টা করছে?

১৮টি রিট এখনো মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট শাখায় পেন্ডিং আছে, কোর্ট অব কোয়ান্টাম্প পেন্ডিং আছে রায় অপেক্ষমান, ICT বিষয়ে রিট পেন্ডিং আছে তারপরেও কোন সাহসে সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করে এনটিআরসিএ?

এবার যদি আমাদেরকে বঞ্চিত করে গণ বিজ্ঞপ্তি দেবার চেষ্টা করে তবে জীবন বাঁচাতে আমরা অবশ্যই আইনের পাশাপাশি রাজপথেও নামবো এবং বিশ্বের দরবারে দেখিয়ে দিবো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকেও এনটিআরসিএ এর চেয়ারম্যান ক্ষমতাশালী, সংবিধান থেকেও শিক্ষামন্ত্রণালয় ক্ষমতাধর।

হে মমতাময়ী মা, এ অবস্থায় আপনার সহানুভূতি ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নাই। আমরা জিন্দালাশ হয়ে আছি, চোখের জলে দিনাতিপাত করছি, আপনি যদি আমাদের দিকে তাকান তবে আমাদের জীবন বাঁচবে এবং সেই সাথে আইনের জয় হবে, সম্মান বাঁচবে সংবিধানের, সম্মান বাঁচবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের। নতুবা বাংলাদেশের মানুষ আইনের প্রতি আস্থা হারাবে ।

সবিনয় অনুরোধ আপনার প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে ৩৫ উর্দ্ধো নিয়োগ বঞ্চিত নিবন্ধিত শিক্ষকদের বিষয়টি মিমাংসা করে তারপর গণ বিজ্ঞপ্তি দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএ কে নির্দেশ দিন। নতুবা গণ বিজ্ঞপ্তি দিলে আমাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।।

৩৫ উর্দ্ধো নিয়োগ বঞ্চিত নিবন্ধিত শিক্ষকগণে বারংবার অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করেছে, তাই ৩৫ উর্দ্ধো নিয়োগ বঞ্চিত পিটশনকারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে আমাদের পরিবারপরিজনকে বেঁচে থাকার অধিকার টুকু দিন।।

সবিনয়ে নিবেদক
সকল ৩৫ উর্দ্ধো নিয়োগ বঞ্চিত নিবন্ধিত শিক্ষকদের পক্ষে –
এস এম আমজাদ হোসেন
সভাপতি
৩৫ উর্দ্ধো নিয়োগ বঞ্চিত নিবন্ধিত শিক্ষক কেন্দ্রীয় ফোরাম

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।