ইচ্ছা করলেই কেউ যাতে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির সদস্য হতে না পারেন সেজন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতার বিধান রাখা হচ্ছে। কমিটির সদস্য হতে হলে ন্যূনতম উচ্চমাধ্যমিক পাসের প্রস্তাব করে এ সংক্রান্ত খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির প্রবিধানমালা-২০০৯ পরিবর্তন করে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

একাধিক শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, বিধি মোতাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিতে গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির প্রবিধানমালা-২০০৯ পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশের সব শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এ কমিটি প্রবিধানের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা পরিবর্তন করে খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করেছে। আগামী সপ্তাহে এটি আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেয়া হবে।

খসড়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডির সদস্য হওয়ার জন্য কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় অনেক অযোগ্য ব্যক্তি বা অভিভাবক সদস্য হয়ে যাচ্ছেন। এতে সেই প্রতিষ্ঠান চালাতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়ম, আইন অমান্য করে নিজেদের ইচ্ছামতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা, নিয়োগ ও ভর্তি বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে ওই প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করা হচ্ছে। এতে প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও সাধারণ শিক্ষকরাও নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেক স্থানে আবার শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সঙ্গে বিরোধও তৈরি হচ্ছে।

ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডির সদস্য হতে হলে তার যোগ্যতা হিসেবে ন্যূনতম উচ্চমাধ্যমিক পাস করার প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়া প্রতিবেদনে।

খসড়া প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অভিভাবক সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে প্রতিষ্ঠানের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে। প্রতিষ্ঠানও ভালোভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে।

অ্যাডহক কমিটির বিষয়ে সেখানে বলা হয়েছে, অনেক প্রতিষ্ঠানে কমিটির নির্ধারিত দুই বছর মেয়াদ শেষে পরবর্তী ছয় মাসের জন্য চার সদস্যবিশিষ্ট অ্যাডহক কমিটি গঠন করতে প্রবিধানে বলা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে এ কমিটি বিধি মোতাবেক নির্বাচন আয়োজন করবে এবং নিয়মিত কমিটি গঠন করে তাদের কাছে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানে এর ব্যত্যয় ঘটছে। অ্যাডহক কমিটির সদস্যরা দায়িত্ব ধরে রাখতে তাদের অর্পিত দায়িত্ব থেকে সরে আসছেন। নির্ধারিত সময়ের পরও নিজেরাই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

এ কারণে অ্যাডহক কমিটি গঠনের পর ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়মিত কমিটি গঠন করতে না পারলে দায়িত্বে থাকা ওই কমিটি ভেঙে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে খসড়া প্রতিবেদনে। নতুন করে আবারও সেখানে অ্যাডহক কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে। আগের অ্যাডহক কমিটির কোনো সদস্য পরবর্তী কমিটিতে স্থান না দিতেও সুপারিশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ডের আহ্বায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির প্রবিধানমালা-২০০৯ পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়েছে। এতে কমিটির সদস্য প্রার্থীদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। অ্যাডহক কমিটি গঠনে কিছু পরিবর্তন আনাসহ বেশ কয়েকটি পরিবর্তন হতে পারে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শককে আহ্বায়ক করে এ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে কমিটি প্রতিবেদন দেবে। তিনি আরও বলেন, প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় থেকে তা চূড়ান্ত হলে একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সেটি বাস্তবায়ন করা হবে। আশা করি, আগামী তিন মাসের মধ্যে এটির বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

কী আছে বর্তমান প্রবিধানমালায়?

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির প্রবিধানমালা-২০০৯ অনুযায়ী, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষককে সদস্য সচিব, দুজন সাধারণ শিক্ষক প্রতিনিধি, একজন মহিলা শিক্ষক প্রতিনিধি, অভিভাবক প্রতিনিধি চারজন (সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলে মাধ্যমিকে দুজন ও প্রাথমিকে দুজন), দাতাদের মধ্য হতে একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, একজন কো-অপ্ট (বিদোৎসাহী সদস্য) ও স্থানীয় সংসদ সদস্যকে ( অথবা জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের অনুমোদন সাপেক্ষে সভাপতি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিংকমিটি গঠন করা হয়ে থাকে।

ম্যানেজিং কমিটি ও গভর্নিং বডির কাজ সম্পর্কে প্রবিধানে বলা হয়েছে, আর্থিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার মানোন্নয়ন ও সহ-পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম নিশ্চিতকরণ, শৃঙ্খলা, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ, বাজেট সভা ও বার্ষিক প্রতিবেদন, ব্যাংক হিসাব পরিচালন ও বিবিধ কার্যক্রম পরিচালনা।

কমিটির নির্ধারিত দুই বছর মেয়াদ শেষে চার সদস্যের একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করার কথা বলা আছে। এ কমিটিতে সভাপতি হবেন সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা (জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের ও উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মনোনীত সরকারি কর্মকর্তা), সদস্য সচিব হবেন প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং দুজন সদস্য থাকবেন।

প্রবিধানে আরও বলা হয়েছে, অ্যাডহক কমিটি নিয়মিত কমিটি গঠনে নির্বাচনের আয়োজন করবে। নির্বাচনে বিজয়ীদের হাতে দায়িত্বভার বুঝিয়ে দেয়ার মাধ্যমে অ্যাডহক কমিটি বাতিল ঘোষণা করা হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।