পদ্মার নতুন করে পানি বৃদ্ধির কারনে রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার ১০ হাজার মানুষ পানি বন্ধি হয়ে পরেছে। গত ৩ দিন ধরে পানি বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল শনিবার মানুষের বাড়ীর উঠান পর্যন্ত ডুবে গেছে । পানি বন্ধিদের পরিবারে চলছে ত্রান সংকট । রোগ,শোক আর বিষধর সাপের ভয় তো আছেই ।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বন্যার পানিতে মাধবপুর, হরিনবাড়ীয়া, লস্করদিয়া, কৃষ্ণনগর, ভবানীপুর, হরিনাডাঙ্গা, চররাজপুর, বিজয়নগর, নারানপুর, আলোকদিয়া, বল্লভপুর, ভাগলপুর, বাগঝাপা, গংগানন্দপুর, কামিয়া, কালুখালী, পাড়াবেলগাছী ও গতমপুর গ্রাম ডুবে গেছে ।

বাড়ীর উঠানে ২ ফুট পানি। তার উপর দাঁড়িয়ে কথা হয় কালুখালীর রতনদিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম হরিড়বাড়ীয়া মৌজার ১ দাগের বাসিন্দা জহুরা বেগমের সাথে। তিনি জানান,বৃহস্পতিবার বাড়ীর আশপাশে কোন পানি ছিলো না। গত ২দিন ধরে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘরবাড়ী তরিয়ে গেছে। ঘরে সঞ্চিত খাবার নেই,নেই বিশুদ্ধ পানি। পরিবারের ৪ সদস্য নিয়ে অতি কষ্টে দিন কাটছে।

একই কথা বললেন, পশ্চিম হড়িনবাড়ীয়া মৌজার চামেলিবেগম, জিন্নাহ, আলী, জাহাঙ্গীর, আরব,হারুন, কদম, কামরুল, মজিবর, মজিদ, ভুট্টো, আক্কাস আলী, জহুরুল, হালিম, জব্বার, বাবলু, সিদ্দিক, বান্দু, সেলিম, এলেম, বাতেন, আলী, আইনদ্দিন, জামাল, সোব্হাান, রাসেদ, আকেল, মালেকা, আলাল, শান্ত, পিন্ট সহ শতাধিক মানুষ ।

কালিকাপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বিল্লাল মন্ডল জানালেন, এর আগেও বন্যায় তার এলাকার ২ শতাধিক পরিবার ডুবে গেলেও কোন প্রকার ত্রান দেওয়া হয়নি বলে জানালেন বিল্লাল হোসেন। এবারেও বন্যায় ৯ নং ওয়ার্ডের ২ শতাধিক পরিবার ডুবে ডেছে। তাদের রোপনকৃত সব্জী ক্ষেত এখন ২ ফুট পানির নিচে।

কালুখালীর কালিকাপুর ইউনিয়নের নারায়নপুর মৌজার শরিফা বেগমের ঘরের মাচার নিচে পানি। ৪ সন্তান নিয়ে তিনি খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সংকটে দিন কাটাচ্ছেন। ওই গ্রামের কনা খাতুন,ইতি আক্তার সবাই একই কথা জানালেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য ইদ্রিস আলী মনো জানালেন,নারানদিয়া এলাকার ২ শতাধিক পরিবার পানিতে ডুবে গেছে।

রতনদিয়ার বিজয়নগর মৌজার হাসান শেখ জানান, বন্যায় পানিতে বিজয়নগর,লস্করদিয়া ও ভবানীপুর এলাকার ৩ শতাধিক কৃষকের লাউ ,শাকসবজী,মুরকাটা পেয়াজ ও ধুনিয়া ফসল ডুবে গেছে।

কালুখালীর নারায়নপুর মৌজার ইসমাহিল শেখ জানান,তিনি সহ অর্ধশত পরিবার নদী ভাংগনের শিকার হয়ে এক বছর আগে নারায়নপুর মৌজায় বাড়ী নির্মান করে বসবাস করছেন। কিন্তু এখনো ভোটার তালিকায় নাম ওঠেনি। এজন্য তাদের ত্রান দেওয়া হয় না। তিনি এব্যাপারে সুদৃষ্টি রাখার জন্য জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

রতনদিয়া লস্করদিয়া নারায়নপুর মৌজার বিল্লাল হোসেন বললেন, পদ্মা নদীর পানি বিপদ সীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ভেবেছিলাম বিপদসীমা অতিক্রম করতে ২/৩ দিন লাগবে। শুক্রবার রাতেই তা বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ২ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মাপার থেকে চরাঞ্চল আরো ৩ ফুট নিচু। তাই চরাঞ্চলের কোন কোন যায়গা বণ্যার পানিতে ৪/৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।হঠাৎ বণ্যায় লাউ ,শাকসবজী,মুরকাটা পেয়াজ ও ধুনিয়া ফসল ডুবে গেছে।

বন্যার্তরা দ্রুত ত্রান ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।