মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

আসসালামু আলাইকুম, প্রথমেই আপনার সু- স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। সেই সাথে মুজিব শতবর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। মা আপনি ১২ লক্ষ রোহিঙ্গার আশ্রয় দাতা, যার ফল স্বরুপ আপনি বিশ্বে আজ ” মাদার অফ হিউমিনিটি” নামে খ্যাত। মা আপনি আজ সর্বোচ্চ প্রশংসিত কাতারে রয়েছেন সারা বিশ্বে। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাংঙ্গালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সুযোগ্য কন্যা। আপনি জাতির পিতার আদর্শে গড়া, তার সু শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া এক মহিয়সী নারী। আপনি মানবতার মা, আপনি দেশের সম্পদ,আপনার দিকে তাকিয়ে হাজারো অসহায় করুন বিষাদময় জীবন হাহাকারে পরিপূর্ণ হৃদয় গুমরে কেঁদে কেঁদে বেঁচে থাকার আশার আলোয় আজও তারা আলোকিত।

  • মা, আজও কেউ আপনার কাছে কিছু চেয়ে পায় নি তা ইতিহাসের পাতায় লিখা নেই, আমি আমার অন্তর থেকে এটাই বিশ্বাস করি আপনি আমাদেরকেও ফিরিয়ে দিবেন না। আজ আমি দু হাত পেতে বেঁচে থাকার আকুতি নিয়ে এক বুক আশা আর কষ্টের হাহাকার নিয়ে লিখতে বসেছি। মা বাঁচার জন্য যেমন খাবারের প্রয়োজন তেমনি একটু সম্মানও প্রয়োজন। আজ উচ্চ শিক্ষিত হলাম কিন্তু বাবা মায়ের চোখে বোঝা হয়ে আছি, পরিবারের চোখে যন্ত্রণা হয়ে আছি। স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকে মানুষ, আমারও একবুক স্বপ্ন ছিলো কোমলমতি শিশুদের হাতে কলমে অক্ষরজ্ঞান ধরিয়ে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কে আরো তরান্বিত করবো। কিন্তুু ভাবিনি স্নাতক শেষ করতে করতেই চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হয়ে সব স্বপ্ন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। স্বপ্ন গুলো সব চোখের জলে ভেসে যাবে, বেঁচে থাকার আশাটাই মরে যাবে। মাগো বাড়ির বাইরে গেলেই শুনতে হয় বেকারত্বে ধিক্কার। সমাজের চোখে বিবৃতিকর এক বস্তু হয়ে আছি। পরিবারের কাছে অপদার্থ।

মা প্রত্যেক টা মুহুর্তে শুনতে হয় কেনো তোকে এত কষ্ট করে নিজেরা না খেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করলাম, আমাদের বোঝা হয়ে থাকার জন্য? প্রতিটি মুহুর্ত এই প্রশ্নটি আমার দৃষ্টিতে দৃশ্যমান। যেখানে দেশের সম্পদ হয়ে, দেশের গৌরব হয়ে বেঁচে থাকার কথা সেখানে আজ আমি দেশের অভিশাপ। জীবন যুদ্ধের পরাজিত এক সৈনিক হয়ে গেলাম। আপনি নারীদের অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে থাকেন তাই সবার থেকে অবহেলা পেয়ে আপনার কাছে আসলাম।আপনিও যদি ফিরিয়ে দেন তাহলে আর বাঁচা হবে না।

  • আমি আর পরিবারের করুন বিষাদময় আর্তনাদ তাদের চোখেমুখে কান্নার ছাপ, করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা আমার দিকে, আমারও অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা হয়, চোখের ভাষায় বোঝানো হয় আমি নিরুপায়। ক্ষমা করে দিও আমায় তোমাদের স্বপ্ন আমি পূরণ করতে পারলাম না। এই দৃশ্যটি আমি আর নিতে পারছি না। উচ্চ শিক্ষিত হয়েও যখন বয়স শেষ হয়ে গেলো তখন চোখের ঘুম গুলো সব চলে যায়, লেগে আছে কান্নার করুন বিষাদময় এক বিবৃতিকর ছাপ।

জীবনের এমন এক পরিস্থিতিতে আজ আমি দাঁড়িয়ে আছি মা, যেখান থেকে প্রতিটা মুহুর্তে মনে হয় জীবনের সব গল্প শেষ করে চলে যাই না ফেরার দেশে। মা আজ সর্বশেষ নিঃশ্বাস টুকু কাজে লাগিয়ে আপনার কাছে লিখতে বসলাম যেখান থেকে খালি হাতে ফিরে আশার কোনো উপায় নেই আমার। মা আপনি আমায় ফিরিয়ে দিলে বাঁচার আর কোনো অবলম্বন থাকবে না পরিবারের বড় মেয়ে আমি। ছোট ছোট ভাই বোনের ভরনপোষণ করিয়ে মায়ের চিকিৎসার খরচ বহন করতে হয়। টিউশনি করিয়ে পরিবারের গ্লানি টেনেছি।কিন্তু সবার জীবনেরি তো কিছু অধ্যায় থাকে যেখানে এসে তার জীবনের নতুন কোনো সম্ভাবনার তৈরি হয়।আজ আমার জীবনে সেই অধ্যায়ের কোনো সম্ভাবনাই দেখছি না, অথচ বয়স শেষ। মাগো প্রতিটি রাত আমার দুঃস্বপ্নে ভেংগে যায়, সেই গভীর রাতে অশ্রু নয়নে গুমরে কেদে ওঠে মন, অনেক হিসেব জমে ওঠে চোখের কোনে।

  • জীবনের সব হিসেব যখন গোলমাল পেকে যায় তখন নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চিন্তা চেতনায় বিভোর হয়ে যাই। বেঁচে থাকার দিশা যখন নেই, স্বপ্ন ভেংগে আলোর দিশা যখন অন্ধকারে তলিয়ে যায় তখন এই অভিশাপ থেকে মুক্তি না পেলে মৃত্যুই অনিবার্য। মাগো আপনি আমাদের অহংকার, আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন। মা আপনিই সেই দেশরত্ন যার তুলনা আপনি নিজেই। আপনার মত জ্ঞানী বুদ্ধিমত্তা সৃজনশীল মহিয়সি, পৃথিবীর ইতিহাসে একজনই।আপনার ভেতরেও শিশুদের মত কোমলমতি একটি মন রয়েছে। আপনি কখনোই কাউকে ফিরিয়ে দেন নি, আমাদের কেও দিবেন না, এই ৩৭ হাজার বেকারের দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করে দিবেন।

উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও আমরা যারা বেকারত্ব নামক অভিশাপে অভিশপ্ত তাদের কে সুন্দর একটি জীবন উপহার দিয়ে স্ব-সম্মানে বাঁচার জন্য, দেশের সম্পদ, পরিবারের অহংকার, সমাজের গৌরব বানিয়ে দিন। মা আপনার অঙ্গীকার ছিলো মুজিব শত বর্ষে কেউ বেকার থাকবে না, এবং আপনি বলেছেন প্রতিটি ঘরে ঘরে সরকারি চাকরি দিবেন। মা আমরা ৩৭ হাজার পরিবার দেশের ৬১ জেলার বাসিন্দা, আপনি প্যানেলের মাধ্যমে নিয়োগ দিলে আপনার অঙ্গীকার যেমন পূরণ হবে অন্যদিকে দেশ হবে কলংক মুক্ত। জাতি পাবে নতুন এক ইতিহাস। যেখানে মুদ্রিত থাকবে ৩৭ হাজার পরিবারের মুখের হাসি। আমরা আপনাকে ” Mother of employment ” নামে আখ্যায়িত করতে চাই।

তানিয়া তাসনিম
মহিলা বিষয়ক সম্পাদক,
প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ ২০১৮ প্যানেল প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কমিটি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।