কুড়িগ্রামের রৌমারী সরকারি সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের স্কুল থেকে প্রশংসাপত্র বিতরণের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। একটি প্রশংসাপত্র তৈরি করতে যেখানে সর্বোচ্চ ১০ টাকা খরচ হয়, সেখানে শিক্ষার্থী প্রতি আদায় করা হচ্ছে ৫০০ টাকা।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে অফিস সহকারি প্রশংসা পত্র দেয়ার সময় জন প্রতি ৫০০ টাকা করে আদায় করছে। ওই টাকা না দিলে স্কুল থেকে প্রশংসাপত্র দেয়া হচ্ছে না। জনপ্রতি ওই হারে আদায় করলে ৪১৩ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অবৈধ আদায়ের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই লাখ টাকার বেশি। সরকারি স্কুলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে অবৈধ টাকা আদায়ের ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

স্কুল থেকে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী রবিউল ইসলাম জানায়, কলেজে ভর্তির জন্য গেলে প্রশংসাপত্র লাগবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। তখন স্কুলে গেলে প্রশংসাপত্র বাবদ ৫শ’ টাকা দিতে হবে বলে জানান প্রধান শিক্ষক আবু হোরায়রা।

প্রধান শিক্ষক স্যারকে প্রশংসাপত্র বাবদ কিছু কম নিতে বললে তিনি বলেন, বিষয়টি কমিটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, এতে আমার কিছু করার নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার বাবা দিনমজুর। আমি ২০০ টাকা নিয়ে গেলে আমাকে প্রশংসাপত্র দেয়নি। প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে অনেক অনুরোধ করেও কাজ হয়নি।

স্কুলের একজন সহকারি শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, প্রশংসাপত্র বানাতে খরচ হয়েছে বড়জোর ১০ টাকা। সেখানে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা নিতে পারে। প্রধান শিক্ষক তার একক সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থী প্রতি ৫০০ টাকা করে আদায় করছেন। এবার ৪১৩ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পাস করেছে। সে হিসেবে শুধু প্রশংসাপত্র বিতরণ করেই দুই লাখ টাকা আয় করবেন তিনি। ওই টাকার কোনো হিসেব না দিয়ে প্রধান শিক্ষক একা ভোগ করবেন ওই অবৈধ অর্থ।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, এভাবে বিভিন্ন পরীক্ষার সময় অতিরিক্ত ফিসহ নানা ফি’র নামে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করেন প্রধান শিক্ষক। যার কোনো হিসাব দেন না তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক আবু হোরায়রা প্রশংসাপত্র বিতরণে জনপ্রতি ৫০০ টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ১০০ থেকে ১৫০ টাকা নেয় হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সাংবাদিকরা আমাকে নিয়ে এত উঠে পড়ে লেগেছে। তবে একমাঘে শীত যায় না।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপঙ্কর রায় অবশ্য জানিয়েছেন, প্রশংসাপত্র বিতরণের বিষয়ে ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দের রেজুলেশন রয়েছে বলে তাকে জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। সে অনুযায়ী টাকা নেয়া হয়েছে। তবে প্রশংসাপত্র বিতরণে তার কমিটি ৫০০ টাকা করে আদায়ের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

তিনি আরও বলেন, প্রশংসাপত্র তৈরিতে ১০ টাকা খরচ করে ৫০০ টাকা আদায় করা উচিৎ নয়। বিষয়টি আমার জানাও নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।