বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের দাবিতে চলমান অবস্থান কর্মসূচির তৃতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার দুই জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অসুস্থ শিক্ষকরা হলেন-নাটোরের মোছা. সালেহা আক্তার ও সাতক্ষীরার সুভাদ্র বৌরাগী। বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতৃত্বে এই আন্দোলন হচ্ছে।
গত রোববার (১৬ জুন) থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু হয়। এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা থেকে হাজার হাজার বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অংশ নিয়েছেন।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে সংগঠনের সভাপতি মো. মামুনুর রশিদ খোকন বলেন, ৯ জানুয়ারি ২০১৩ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬ হাজার ১৯৩ টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়েছেন। জাতীয়করণকালীন ২৬ হাজার ১৯৩ টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিসংখ্যান করা হয়েছিল তার সংখ্যা যথাযথ না হওয়ায় জাতীয়করণ যোগ্য আরও ৪১৫৯ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ হতে বঞ্চিত হয়।
সংগঠনের এক বিবৃতি বলা হয়, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২৬,১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের ঘোষণা দিয়ে জাতির পিতার মত আরও একটি ইতিহাস রচনা করেছেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, জাতীয়করণকালীন ২৬,১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিসংখ্যান করা হয়েছিলো তার সংখ্যা যথাযথ না হওয়ায় জাতীয়করণযোগ্য আরো কিছু সংখ্যক বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কর্মরত শিক্ষকগণ জাতীয়করণ হতে বঞ্চিত হয়।
তৃতীয়ত ধাপের বিদ্যালয় সমূহের ক্ষেত্রে ২৭ মে ২০১২ইং তারিখের পূর্বে স্থাপিত ও পাঠদানের অনুমতির জন্য আবেদনকত বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় উল্লেখিত ৩য় ধাপের বিদ্যালয়গুলোর সমপর্যায়ে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তৎকালিন কিছু কর্মকর্তা কর্মস্থলে না থাকায়, সকল শর্ত পূরণ করার পরও বিদ্যালয়গুলো জাতীয়করণের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়নি।
নেতারা বলেন, জাতীয়করণকালিন পাঠদানের অনুমতি ও রেজিষ্ট্রেশন কার্যক্রম স্থগিত করায়, আমরা বেতন-ভাতা সুবিধা ও ছাত্র-ছাত্রী উপবৃত্তি, টিফিন থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের দাবীকৃত বিদ্যালয়সমূহ ধারাবাহিকভাবে ২০০৯-২০১৮সাল পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আসছে।
এছাড়া ২৬,১৯৩টি বিদ্যালয়ের তালিকার বাহিরে পার্বত্য অঞ্চলের ইউএনডিপি পরিচালিত ২১০টি বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশেষ বিবেচনায় জাতীয়করণ করেন।
তারা বলেন, আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। কোন প্রকার সহিংসতা বা কারো প্ররোচনায় নয়। আমরা দীর্ঘ বছরের পর বছর বিনা বেতনে বিদ্যালয়সমূহে কর্মরত থেকে এদেশের শিশুদের পাঠদান করিয়ে আসছি। আমাদের অনেক শিক্ষক ইতোমধ্যে চাকরির বয়সমীমা হারিয়েছে। বিদ্যালয়সমূহে কর্মরত অধিকাংশ শিক্ষকদের অন্যত্র চাকরির আবেদনের বয়স সীমা নেই। এতে আমরা সংসার জীবনে চরম সংকটের মুখে পড়ছি।
তারা বলেন, এ অবস্থা থেকে কেবল আমরা মানবতার জননী, উন্নত রাষ্টের স্বপ্নদ্রষ্টা, যিনি ২৬,১৯৩টি বিদ্যালয়ের ১,০৪,৭৭২ জন শিক্ষকের মুখে অন্য তুলে দেয়, যিনি ৭ লক্ষ্য রহিঙ্গাকে বুকে টেনে নিয়ে মায়ের মমতায় আশ্রয় দেয়, যিনি নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেন, তার মাধ্যমেই উত্তরণ পেতে পারি।
অবস্থান কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব মো. কামাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ জাফর ইকবাল প্রমুখ।