কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রাথমিক শিক্ষকদের মহাসমাবেশ শুরুর আগেই লাঠিচার্জ  করেছে পুলিশ। সকাল সাড়ে ৯টায় পুলিশ শিক্ষদের ওপর লাঠিচার্জ  শুরু করে। একপর্যায়ে শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে টিকতে না পেরে দোয়েল চত্বরের দিকে চলে যায়। সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতিকে আটক করা হয়েছে বলে একাধিক শিক্ষক নেতা জানিয়েছেন।

সমাবেশের আগের দিন মঙ্গলবার রাতে শিক্ষক নেতারা গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর বাসায় গিয়ে তাঁর সাথে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে মন্ত্রী ১৫ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সাথে পরিষদের নেতাদের সাক্ষাৎ করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। সব দাবি মেনে নেয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত একজন শিক্ষক নেতা এ এতথ্য নিশ্চিত করেছে।

তবে সমাবেশের আগের দিন রাতে প্রতিমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের বিষয়টি চাউর হলে সাধারণ শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় আমিনুল ইসলাম চৌধুরী নামের এক শিক্ষক ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন,তাহলে সমাবেশের প্রয়োজন আছে? সাহাব উদ্দিন নামের এক শিক্ষক লিখেছেন আবার আশ্বাসের আন্দোলনেেের করুণ পরিণতি হবে। শিবাজি বিশ্বাস নামের এক শিক্ষক লিখেছেন আগে কেন মন্ত্রীর বাসায় আলোচনায় গেলেন বুঝতে পারছি না।

সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে এবং প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে বেতন বাস্তবায়নের দাবি আদায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গত ১৭ অক্টোবর পূর্ণদিবস, ১৬ অক্টোবর অর্ধদিবস, ১৫ অক্টোবর ৩ ঘণ্টা এবং এর ১৪ অক্টোবর কর্মসূচির প্রথমদিনে ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ ডাকে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় ঐক্য পরিষদের মুখপাত্র মো. বদরুল আলম জানান,প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসন না করে কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের সাথে প্রহসনমূলক আচরণ করছেন। এতে করে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান কমেছে। ২৩ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশে অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষক উপস্থিত থাকবেন। মহাসমাবেশ থেকে আরও কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হবে। শিক্ষকরা যাতে মহাসমাবেশে না আসে সেজন্য তাদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও শোকজ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন এ শিক্ষক নেতা। প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণের দাবিতে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে সহকারী শিক্ষকরা ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশনে বসলে তৎকালীন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার ১ মাসের মধ্যে শিক্ষকদের দাবি বাস্তাবয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সে আশ্বাসে শিক্ষকরা আমরণ অনশন স্থগিত করেন। কিন্তু ২ বছর পার হলেও শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসন হয়নি।

গত ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের আগে শিক্ষকরা আবারো আন্দোলনের ডাক দিলে বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসনের বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করেন। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী সরকারের ১০ মাস পার হয়ে গেলেও সঠিক কোনো উদ্যোগ না থাকায় শিক্ষকরা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।